আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের ওপর হামলা কোনোভাবেই সমর্থন করেন না ৮৭ শতাংশ মানুষ। প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়, আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের ওপর আইনবহির্ভূত হামলা সমর্থন করেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ বলেছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। জরিপে ‘না’ ভোট পড়েছে ১৭ হাজার ৪৪টি।
জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১১ শতাংশ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। অর্থাৎ আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের ওপর আইনবহির্ভূত হামলার যেসব ঘটনা ঘটেছে, এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। জরিপে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৯৬৭টি।
জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২ শতাংশ পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি। জরিপে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য’ নেই এমন একটি ঘর ছিল। মন্তব্য নেই-এর ঘরে ভোট দিয়েছেন ৫০৬ জন।
ফেসবুকে পরিচালিত এই জরিপে ভোট দিয়েছেন ১৯ হাজার ৫১৭ জন। একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তিন দিন প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে এই জরিপ চালানো হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সাবেক একজন বিচারপতিকে। আদালত চত্বরে তাঁদের কারও কারও ওপর হামলা হয়। তাঁদের লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা ও মারধরের মতো ঘটনা ঘটে। এমন প্রেক্ষাপটে এই জরিপ করেছে প্রথম আলো।
আদালত চত্বরে আসামির ওপর হামলা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। গত ২৯ আগস্ট সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে যাওয়ার সময় কখনো কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়, এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এমন ঘটনা যাতে না হয়, সে বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল ও চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
অবশ্য উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেছিলেন, একটি দল (আওয়ামী লীগ) ও মন্ত্রিসভার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের জনগণের শত্রুর পর্যায়ে নিয়ে আসা—এটা তো সাবেক সরকারের দায়ভার। তাঁরা মন্ত্রিসভার সদস্য ও সমর্থকদের এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে একটি জনরোষ তৈরি হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁর সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর কোনো আচরণ করা যাবে না।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, যখন কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়, তখন তাঁকে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো প্রকারের নির্যাতন করার সুযোগ নেই। আসামিকে নির্যাতন কিংবা হেনস্তা করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।