আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ছাত্রনেতারা বলছেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন প্রহসনের আশ্বাস দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে জাকসু নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে প্রশাসন ও ছাত্রনেতারা।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাকসু নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১২ সদস্যের এ কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক।
এ সময় ছাত্রনেতারা বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) বিশ্ববিদ্যায়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশন হবে। এ অধিবেশনকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বানচাল করতে তড়িঘড়ি করে এ সভা ও কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁদের দাবি, দুপুর ১২টায় মুঠোফোনের মাধ্যমে এ মতবিনিময় সবার কথা জানানো হয়। আগে থেকে না জানানোর কারণে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) নেতা-কর্মীর উপস্থিত হতে পারেননি। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ তম সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘এ কমিটির মাধ্যমে জাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন ও ফেব্রুয়ারি নাগাদ জাকসু নির্বাচন দিতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশন আছে। এই অধিবেশনে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, সেই জন্যই আগেরদিন কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে ডেকে চা খাইয়ে ঠান্ডা করার জন্য এই মতবিনিময় সভা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে’ ৭৩-এর অধ্যাদেশ যথাযথভাবে পালন করা হয়। কিন্তু ছাত্রদের বিষয় আসলেই যত অনিয়ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম করাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আলোচনা সভা শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘কালকের সিনেট অধিবেশন যাতে নির্বিঘ্নে এবং শিক্ষার্থীরা কোনো দাবি তুলে যেন কোনো আন্দোলন করতে না পারে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আই ওয়াশ করে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক মারুফ বিন মোজাম্মেল, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট সোসাইটির সভাপতি পাভেল রহমান, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক শাকিল-উজ-জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।