ডাকসু নির্বাচন

অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রার্থী করার পক্ষে উপাচার্য!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রার্থী করার পক্ষে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান। তবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে কারা ভোটার ও প্রার্থী হবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই (যাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়ছেন) প্রার্থী হতে পারেন। গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটিও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মত দিয়েছে। উপাচার্যের চাওয়া পূরণ করতে হলে ভোটের আগেই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে।

চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন করার লক্ষ্যে অটল রয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভা শেষে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসব কথা জানান৷ বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা—দীর্ঘ চার ঘণ্টার ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন৷ উপাচার্যের সভাপতিত্বে সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত কমিটির পাঁচ সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন ৷

ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ১৯৯১ সালের সংশোধনী অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী দুটোই হতে পারেন৷ তবে যাঁরা এমফিল ও পিএইচডি করছেন, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেও তাঁরা প্রার্থী হতে পারবেন না৷ এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বা অন্য কোনোভাবে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখা শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না।

ব্রিফিংকালে উপাচার্য বলেন, ‘আলোচনায় মূলত দুটি বিষয় ছিল—নির্বাচনী আচরণবিধি আর ডাকসুর গঠনতন্ত্র এই দুই বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা তাঁদের সুপারিশ বা বক্তব্য দিয়েছে৷ বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাঁরা ভোটার হবেন, তাঁরাই যেন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান৷ এই পয়েন্টে আমরা সবাই একমত৷ সভায় সহাবস্থান নিয়ে কথা হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, সে বিষয়েও কথা হয়েছে৷ গঠনতন্ত্রে যেভাবে বলা হবে, ভোটকেন্দ্র সেখানেই হবে৷ এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সিন্ডিকেটে।’

উপাচার্যের এই বক্তব্য অনুযায়ী এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যয়নরতরাও প্রার্থী হতে পারবেন, যদিও বিদ্যমান গঠনতন্ত্র মতে তাঁরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারেন না ৷ ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান৷ কাজের পরিধি বিবেচনা করে তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান উপাচার্য৷

সভায় ছাত্র সংগঠনগুলো যা বলেছে

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বর্তমানে চাকরির বয়সসীমা ৩০ রয়েছে৷ আমরা চাই, ডাকসুতে প্রার্থিতার সীমা যেন ২৯ বা ৩০ করা হয়৷ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পর যাঁরা এমফিল ও পিএইচডি করছেন, তাঁদের আমরা নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ধরার দাবি জানিয়েছি৷ তবে সন্ধ্যাকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের আমরা নিয়মিত বলতে পারছি না৷’

পরিবেশ পরিষদের সভায় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে যোগ দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার৷ সভা শেষে আকরামুল হাসান তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷

পরে আকরামুল হাসান বলেন, ‘মধুর ক্যানটিন ও আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত পরিবেশ পরিষদে কার্যকর হওয়ার পরই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে৷ কারা ভোটার ও প্রার্থী হবেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ যেহেতু দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে, তাই আমরা প্রস্তাব রেখেছি যাঁরা হল সংসদ ও ডাকসুর ফি দেন, তাঁদের সবার জন্য ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রটি উন্মুক্ত করতে হবে৷’

আকরাম বলেন, 'ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, সে বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি কেন্দ্রীয়ভাবে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর করার জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হোক৷ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য ভোটের আগের রাত থেকে ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশের জায়গাগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার কথা বলেছি৷ এ ছাড়া, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে উপাচার্যের ক্ষমতায় অগণতান্ত্রিক কিছু জায়গা রয়েছে, সেখানে ভারসাম্য আনার কথা আমরা বলেছি৷’

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ-মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে সহাবস্থান না থাকায় ভোটকেন্দ্রগুলো হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার ব্যাপারটি আমরা আবারও সভায় উত্থাপন করেছি । এ ছাড়া সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার বিষয়টিও আমরা বলেছি । যেহেতু অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে, তাই প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রাখার কথা আমরা বলেছি ।’

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘প্রার্থিতার সীমা ও ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি৷ যাঁরা হল সংসদ ও ডাকসুর ফি দেন এবং কোনো হলের সঙ্গে সংযুক্ত, তাঁদের ডাকসুর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছি৷ হলে যেহেতু সহাবস্থান নেই, তাই ভোটকেন্দ্রগুলো হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার ব্যাপারটি আমরা আবারও সভায় উত্থাপন করেছি।’

ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বলেন, ‘সভায় আমরা যাঁরা হল সংসদ ও ডাকসুর ফি দিই, তাঁদের ডাকসুর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছি । ভোটকেন্দ্রগুলো হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা ও সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা আমরা বলেছি । এ ছাড়া সহাবস্থান নিশ্চিতের বিষয়টিতে আমরা জোর দিয়েছি ।’