ট্রেন দুর্ঘটনায় নানা সময় মৃত্যুবরণ করা মানুষের স্বজনদের খোঁজ মেলে না। আবার হারিয়ে যাওয়া স্বজনের খোঁজ না পেয়ে মর্গে মর্গে ঘোরে মানুষ। মরদেহ উদ্ধারের পর আলামত সংগ্রহ করে মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে।
মরদেহের সঙ্গে থাকা উপকরণগুলো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মর্গের ডোমঘরের সামনের গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। হারিয়ে যাওয়া স্বজনের খোঁজ পেতে অনেকে আসেন এখানে রাখা উপকরণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে। খুঁজে পেতে শেষ চিহ্নটি।
বাংলাদেশে রেল পুলিশের হিসাবে, ২০১৬ সালে প্রায় এক হাজার মানুষ রেললাইনে কাটা পড়ে মারা যাওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। বছরে রেলে কাটা পড়ে যে মৃত্যু হয়, তার বড় একটি অংশ হয় ঢাকা জেলাতেই। বছরে গড়ে সেটি ৩০০-র কম নয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আসল সংখ্যা এর চেয়ে বেশি।
১৮৯০ সালের রেল আইনে রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এমনকি এর মধ্যে গরু-ছাগল ঢুকে পড়লে সেটিকেও নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। রেলে কাটা পড়ে কেউ আহত হলে উল্টো ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারে রেলওয়ে। এত সব কঠোর নিয়ম থাকার পরও প্রতিবছর হাজারের বেশি মানুষর মৃত্যুর কারণ কী?
ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রা, চলন্ত ট্রেন থেকে নামা, চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়া, ট্রেন আসার আগে দ্রুত পার হতে যাওয়া আর রেললাইনগুলো হাঁটার পথ হিসেবে ব্যবহার করাই মূলত ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ।
কমলাপুর রেলস্টেশন মর্গের প্রধান ডোম ইমরান হোসেন জানান, এগুলো সবই ট্রেনে কাটা বেওয়ারিশ লাশের আলামত। ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলে সাধারণত অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ, যার তদন্তের ভার আসে রেলওয়ে থানার পুলিশের কাছে। এসব মামলার বেওয়ারিশ লাশের আলামত সংগ্রহ করে কমলাপুর রেলস্টেশনের মর্গের ডোমঘরের পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে কিছুকাল পরে হলেও আলামত দেখে লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেন স্বজনেরা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মর্গ ঘুরে ছবি তুলেছেন দীপু মালাকার।