গ্রীষ্মের এ সময় পুরুষ বাবুই পাখিরা কচি তাল, খেজুর, ধান-ঘাসপাতার শিরার এক পাশে ঠোঁট চালায়। এরপর ওড়ার জন্য খুব জোরে ডানা ঝাপটায়। এতে গতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রফলকের একাংশ ঠোঁটের সঙ্গে কেটে যায়। আর দু-তিন ফুট লম্বা পত্রফলক ঠোঁটে চেপে পতপত করে উড়ে আসে সরু লম্বা গাছে। সেখানে গাছের সরু ডালে সেটা প্যাঁচায়, গিঁট দেয় এবং বাসা বুনতে শুরু করে। বাবুই পাখি শৈল্পিক কারিগর। এদের বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুতও বটে। আগের দিনে হামেশাই তালগাছে বাবুই পাখির বাসার দেখা মিলত। কালের বিবর্তনে সচরাচর এখন আর বাবুই পাখির বাসা তেমন আর দেখা মিলে না। তবু গ্রামীণ জনপদে বাড়ির সঙ্গে লম্বা একটি তালগাছে বাবুইয়ের বাসা তৈরির কয়েকটি ছবি নিয়ে এই গল্প।
গ্রীষ্ম প্রজনন ঋতু। তাই তো আপন মনে সুচালো ঠোঁটের সাহায্যে পাতা ফুটো করে সেলাইয়ের মতো ফোঁড়ের পর ফোঁড় দিয়ে বাসা বুনছে বাবুই পাখি।লম্বা টুপি আকারের বাসার অর্ধেকটা তৈরি হয়ে গেলেই উপনিবেশে ঝাঁকে ঝাঁকে স্ত্রী বাবুই হাজির হয়। বরবেশী পুরুষেরা তখন কিচিরমিচির শব্দে প্রেমের গান গেয়ে, ডিগবাজি খেয়ে, বাসা দুলিয়ে প্রেয়সীদের অভ্যর্থনা জানায়। জানায় বিয়ের আহ্বান। রুচিসম্মত বাসা বানানো পাখিদের মধ্যে এ দেশে বাবুইয়ের স্থান প্রথম। কারণ, তার বাসা বানানোয় রয়েছে নিপুণ শিল্পীর ছাপ। তালপাতায় ঝুলে আছে বাবুই পাখির বাসা। এদের বাসায় আছে সঠিক ও পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলব্যবস্থা, সুন্দর প্রবেশপথ, দুর্যোগ বা শত্রুর হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা, একাধিক কুঠুরি, ডিমের ঝুড়ি—সবকিছুই। বাসার নিচের কুঠুরিতে একটু কাদামাটি বা গোবর দিয়ে রাখে, যাতে বাসাটি কিছুটা ভারী হয় ও ঝড়-বাতাসে না ওলটায়। দেশের সর্বত্র গ্রাম ও উন্মুক্ত এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মেলে এই পাখির। ধান, গম ও শস্যদানা পছন্দ। কীটপতঙ্গেও আপত্তি নেই। বাসা বুননে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। বুদ্ধি খাটিয়ে, পরিকল্পনা করে সুনিপুণভাবে বাসা বানায় বলেই বাবুই পাখিকে শৈল্পিক কারিগর বলা হয়।