ধরুন আপনি এই দেশ থেকে ইউরোপ কিংবা আমেরিকার কোনো সভ্য দেশে ঘুরতে গেছেন। এয়ারপোর্টে নেমে রাস্তায় প্রবেশ করতেই দেখলেন, রাস্তার চারপাশ অনেক সুন্দর, অনেক সুশৃঙ্খল। গাড়িগুলো খুব সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে, পুরোপুরি ট্রাফিক আইন মেনে। কেউ অযথা হর্ন বাজাচ্ছেন না, কেউ নিয়মবহির্ভূতভাবে ওভারটেক করছেন না। ৪০ কিলোমিটার বেগের লেনে গাড়ি ৪০ কিলোমিটার বেগেই চলছে। ঠিক ৬০ কিলোমিটারের লেনে, ৮০ কিলোমিটারের লেনেও সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই চলছে।
আবার কেউ ট্রাফিক আইন অমান্য করলে শাস্তি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আইন অনুযায়ী তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে। তিনি এমপি, মন্ত্রী, আমলা, বড় ব্যবসায়ী বা সেলিব্রেটি, যে–ই হোন না কেন।
সোজা কথা, সেসব সভ্য দেশে একটা নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, আপনি যে–ই হোন না কেন, আপনি আইন অমান্য করলে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
এবার আসি আমাদের এই বঙ্গদেশের পরিবহন খাতে। এখানে পরিবহন খাত মানে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যে ভরপুর। যেখানে নিয়মের কোনো বালাই নেই। সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নেই। মোটাদাগে বলা যায়, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা’?
রাস্তায় গাড়ি চলাচলে কোনো ইতিবাচক দিক নেই। যে যেদিক দিয়ে পারে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে যত্রতত্রভাবে। গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই, গণপরিবহনগুলোয় যাত্রী উঠানামার ক্ষেত্রে নিয়মশৃঙ্খলা নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হচ্ছে, দেশের রাজধানীর অধিকাংশ গণপরিবহনের ফিটনেস নেই। বাসগুলোর রংচং ঠিক নেই, ইন্ডিকেটর, লুকিং গ্লাস—কোনো কিছুরই সঠিক দেখভাল নেই। গোটা বডি দেখে মনে হয় কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বাস সেগুলো।
রাস্তায় বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল প্রভৃতি যানবাহন চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো লেন নেই। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই দৃশ্য দেখা যাবে বলে মনে হয় না।
আবার ঢাকার রাস্তায় বিশৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থার জন্য যাত্রী–পথচারীরাও কম দায়ী নন। আমাদের দেশের কয়জন যাত্রী নির্দিষ্ট স্টপেজে গিয়ে বাসে উঠানামা করেন। কয়জন মানুষ নিয়মমাফিক ট্রাফিক আইন মেনে চলেন? কয়জন পথচারী ফুটওভার ব্রিজ বা ফুটপাত ব্যবহার করেন। কতজন জেব্রাক্রসিং মেনে রাস্তা পারাপার হন?
সরকার সবাইকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নাকি এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে দেশের রাজধানীর ট্রাফিক–ব্যবস্থা এখনো মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে এবং পরিবহন খাত সিন্ডিকেটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সে দেশ কতটুকু স্মার্ট, কতটুকু ডিজিটাল হয়েছে, তা এমনিতেই বোঝা যায়!
বাইরের দেশের কোনো মানুষ যখন আমাদের এয়ারপোর্টে নামার পর রাস্তায় পা রাখবেন, ঠিক তখনই বুঝে ফেলবেন, এই দেশ কতটা ডিজিটাল, কতটা সুন্দর আর কতটা স্মার্ট হয়েছে? আর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবেন এই জাতি কতটুকু সভ্য?
মো. লিটন হোসেন
শিক্ষার্থী, আইন প্রোগ্রাম
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়