প্রতিক্রিয়া

ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষার আহ্বান কেন

প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে আমরা অনেক হইচই ও হাঁকডাক দেখলাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কয়েক দিন এই সংক্রান্ত আলোচনায় সরগরম ছিল।

প্রশ্নফাঁসের সকল উপাদান অর্থাৎ প্রমাণাদি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে প্রশ্নফাঁস হওয়া নিয়ে অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে।

অথচ অত্র প্রাইমারি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সময় টিভি ও এটিএন বাংলায় এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখলাম। এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

কাজেই প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে সংশয় নেই বললেই চলে। এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

অথচ লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সংগ্রহ করার জন্য বলেছে তারা।

একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যধিক প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হলো। কারণ মৌখিক পরীক্ষার জন্য মেধাতালিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই তারা ভুল করল। একটা গলদ পরিলক্ষিত হয়েছিল উত্তরপত্র মূল্যায়নে। ভুলক্রমে তারা দুই সেট প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন না করেই মেধাতালিকা দিয়ে বসল। এ নিয়ে সমালোচনা হলে মধ্যরাতেই আবার সংশোধনী দেওয়া হয় এবং পুনরায় সংশোধিত মেধাতালিকা প্রকাশ করে। এতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে।

বোঝাই যাচ্ছে কারো কারো জন্য মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়াটা স্রেফ একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অনেকেই মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়বেন। কারণ যারা প্রশ্ন কিনতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের পক্ষে এই প্রশ্নে টেকা সুদূর পরাহত বিষয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু  তা না করে তারা ‘প্রহসনের’ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে এসব অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। এতে করে অনুমান করা যায় এই অধিদপ্তরে স্বচ্ছ নিয়োগ হবে না।

তাহলে এত এত প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কেন ডাকা হলো? যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেননি, তাঁরা ইতিমধ্যে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন মৌখিক পরীক্ষা দিতে। এসব পরীক্ষার্থী জানেন যে, তাঁরা নিয়োগ পাবেন না। কারণ যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে অন্যদের প্রাপ্ত নম্বরের ফারাক অসম্ভব রকমের বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা।

কাজেই প্রত্যাশা থাকবে এই প্রহসনের নিয়োগ বন্ধ হবে। পারলে নতুন করে পুনরায় পরীক্ষা নিন। আপনাদের প্রতি চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে নিজেদের হাসি ও তামাশার উপাদান বানাবেন না।

আশা করব ভবিষ্যতে এই ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অনৈতিক মেধাতালিকা যেন প্রকাশ না করা হয়। এতে করে আমাদের আর্থিক ও মানসিক, উভয় প্রকার সাশ্রয় ঘটবে।

তবে অচিরেই  চাকরিপ্রার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির আবেদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। একে তো পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই কোটা ব্যবস্থার আধিক্য, তার উপর প্রশ্নফাঁস! কাজেই যারা সাধারণ প্রার্থী তাদের জন্য আর কী–ই বা রইল এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়? তার চেয়ে ভালো হয়, এই মৌখিক পরীক্ষা বয়কট করুন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে এটাই হোক নীরব প্রতিবাদ।

শিহাব উদ্দিন
(চাকরিপ্রার্থী)
লক্ষ্মীপুর