প্রতিটি মানুষ জীবিকা অর্জনের জন্য যেকোনো পেশায় নিযুক্ত। শিক্ষকতা একটি পেশা এবং এটিকে মহান পেশা হিসেবে ধরা হয়। কেননা অন্যকে জ্ঞানের আলো দান করাই শিক্ষকের মূল কাজ।
অথচ আমাদের সমাজে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ শিক্ষকদের নিম্ন চোখে দেখে। মানুষ ভাবে শিক্ষকেরা কৃপণ, তারা খরচ কম করে। অথচ তারা জানে না যে, প্রাথমিকের একজন সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এবং প্রধান শিক্ষক ১২তম গ্রেডের কর্মচারী।
দ্রব্যমূল্যের দাম হু হু করে বাড়ছে অথচ প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতনের নড়চড় হয় না। প্রায় প্রতিটি শিক্ষক ঋণে জর্জরিত। কারণ এই বেতনে একজন শিক্ষক পরিবারের ভরণপোষণ ঠিকমতো করতে পারেন না। সবারই নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
অথচ উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকের বেতন বেশি এবং সামাজিক মর্যাদাও বেশি থাকে। একটি জাতির মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষার আলোতেই জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছে।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা চাওয়া হয় স্নাতক পাশ। এখন এসএসসি/এইচএসসি পাশ যোগ্যতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা যায় না। প্রাথমিকে অনার্স/মাস্টার্সধারী মেধাবীদের অনেকেই এখন শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করছেন। কিন্তু নিম্ন বেতন গ্রেডের কারণে মহান পেশা শিক্ষকতা ছেড়ে আবার অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ভালো মানের থাকলে কেউ এ পেশাকে ছেড়ে চলে যেতেন না।
নতুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশা করি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি সদয় হবেন। কেননা তিনিও একজন শিক্ষক। তিনি বোঝেন যে, মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি করা দরকার।
ইতিমধ্যে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর ইতিবাচক মন্তব্যে শিক্ষকেরা মনে আশার আলো দেখা শুরু করেছেন। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এখন সময়ের দাবি।
এইচএসসি পাস নার্স ও কৃষি উপসহকারীরা ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তার মর্যাদা পেলে স্নাতক পাস যোগ্যতায় শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কেন? অথচ এই শিক্ষকরাই শত কষ্টের মাঝে থেকেও প্রতিনিয়ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা তৈরি করছেন।
সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষকের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো প্রয়োজন। জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হলে বেতন বৃদ্ধি প্রয়োজন।
তাই প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মুন্নাফ হোসেন
সহকারী শিক্ষক,
মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল