একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ শুরু হয় প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনা দিয়ে। যদি শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপটা ভুল বানান আর অসামঞ্জস্য পড়াশোনা নিয়ে শুরু হয়, তাহলে বিষয়টা কেমন হবে?
২০২৩ সালের অনেক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ভুলে ভরা। আর এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। এই ভুল পড়াশোনা থেকে শিক্ষার্থীরা কত দূর এগিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের এত জ্ঞানী ব্যক্তিরা বই লেখেন, সম্পাদনা করেন, তারপরও এত ভুল কীভাবে সম্ভব! আমরা কি বছরের পর এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল শিক্ষা দিয়ে বড় করব? এই ভুলের শেষ কোথায়?
নিম্নে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাস্তরের বইয়ে কিছু ভুল, যা আমি খুঁজে পেলাম তা হলো:
প্রাথমিকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রথমেই শিখন-শেখানোপ্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা শিরোনামের পর্যায়-২-এ ‘ভাষা-দক্ষতা’ শব্দটি তিন শ্রেণির বইতে তিনভাবে (ভাষাদক্ষতা/ভাষা-দক্ষতা/ভাষা দক্ষতা) লেখা হলো। অথচ লাইনগুলোতে বিস্তারিত অন্যান্য লেখা সব শ্রেণির বাংলা বইতে একই।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘অচিন্ পুরে’ লেখা, কিন্তু সঠিক বানান অচিনপুরে।
পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ৪০ পৃষ্ঠায় (বৌদ্ধ) শব্দটি দুই রকমের বানান লেখা হলো।
পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ৪৭ পৃষ্ঠায় ‘ডিসেম্বর’ বানানটি সঠিক যুক্তবর্ণ হয়নি। যেটি ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় ডিসেম্বর বানানটি দেখলে বোঝা যায়। পঞ্চম শ্রেণির ৯৫ পৃষ্ঠায় [মুহাম্মদ (স)] লেখা, কিন্তু যথাযথ বানান হবে মুহাম্মদ (সা.)।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় ‘পরস্পর’ শব্দটিও ভুল বানানে লেখা। একই পৃষ্ঠায় (আসে নি) লেখা, কিন্তু যথাযথ ও প্রচলিত বানান হচ্ছে আসেনি। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৯৮ পৃষ্ঠায় যিলকাদ লেখা, যথাযথ বানান হচ্ছে জিলকদ। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১০২ পৃষ্ঠায় ‘ঝর্ণা’ লেখা, কিন্তু একই বইয়ের ৩১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ঝরনা’। তাই ১০২ পৃষ্ঠার ঝর্ণার সঠিক বানান হবে ঝরনা।
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ৬২ পৃষ্ঠায় ‘বাঁধো নি’ লেখা, কিন্তু যথাযথ ও প্রচলিত বানান হচ্ছে ‘বাঁধোনি’।
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (রা) লেখা, কিন্তু যথাযথ বানান হবে হজরত আবু বকর (রা.), একইভাবে নবিজি (স) হবে নবিজি (সা.) হবে। একই ধরনের সমস্যা আরও আছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়েও অনেক ভুল আছে। যেমন ৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা ‘বললেন দ্যাখো’। কিন্তু সেখানে হবে ‘বললেন, দ্যাখো’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘পায় নি’, কিন্তু যথাযথ বানান হবে ‘পায়নি’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘আত্মপরিাচিতি’, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ‘আত্মপরিচিতি’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘গলগতভাবে’, কিন্তু শুদ্ধ বানান ‘দলগতভাবে’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘মনীদের’, কিন্তু সেটি হবে ‘মনীষীদের’। ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা ধানক্ষেত, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ‘ধানখেত’। এ ছাড়া ‘দেখে নি’, ‘করেন নি’, ‘চান নি’ লেখা, কিন্তু যথাযথ ও প্রচলিত বানান ‘দেখেনি’, ‘করেননি’, ‘চাননি’।
৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা ‘হয় নি’, ‘দেয় নি’ লেখা, কিন্তু সঠিক ও প্রচলিত বানান ‘হয়নি’, ‘দেয়নি’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘লুৎফর রহমান’, কিন্তু সঠিক হবে ‘শেখ লুৎফর রহমান’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘সরকারি অফিসের কেরানি’, কিন্তু সেটি হবে ‘আদালতের সেরেস্তাদার’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘ফার্সি’, কিন্তু শুদ্ধ বানান ‘ফারসি’। বইয়ের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল’, কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’, কিন্তু সঠিক তথ্য হবে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল উর্দু প্রাইমারি স্কুল’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘রোকয়ো’, কিন্তু হবে ‘রোকেয়া’। একই পৃষ্ঠায় লেখা ‘সাহত্যি’, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ‘সাহিত্য’।
মাজহারুল ইসলাম শামীম
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ