প্রতিক্রিয়া

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি কেন বর্ষাকালে ?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়) ছুটির তালিকায় অসংগতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনোজগতে যৌক্তিক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছিল, স্যার গ্রীষ্মকাল তো চলে গেল। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বর্ষাকালে কেন? এ প্রশ্ন তোলাই স্বাভাবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বর্ষাকালে কেন দেওয়া হবে—এ প্রশ্ন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের।

মাধ্যমিক পর্যায়ের সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি (২০২৩ শিক্ষাবর্ষের সরকার কর্তৃক ছুটির তালিকা অনুযায়ী) শুরু হয় গত ২০ জুলাই থেকে। যখন পুরো বর্ষাকাল। অপরদিকে চলতি শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি পবিত্র ঈদুল আজহার সঙ্গে সমন্বয় করে ২১ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। এ সময়টাও প্রকৃতিতে পুরো বর্ষাকাল।

২০২২ শিক্ষাবর্ষেও মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ বা ছুটি জুলাই মাস তথা বর্ষাকালে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে বারবার বলতে শোনা যায়, গরমের সময় গরমের ছুটি না দিয়ে বর্ষাকালে দিয়ে লাভ কী?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির তালিকায় এই ঋতুভিত্তিক অসংগতি প্রায় সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের কাছে ঋতু চেনার ক্ষেত্রে ভুল বার্তা যেতে পারে। তা ছাড়া গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকলে সমস্যাটা কোথায়? যদিও চলতি বছর প্রচণ্ড দাবদাহে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এক দিন ও পাঁচ দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। যদি গ্রীষ্মকালে ছুটিটা থাকত, তাহলে তো আলাদাভাবে বাড়তি ছুটি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হতো না। তাছাড়া এ বছর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচণ্ড দাবদাহে হিট স্ট্রোক শিক্ষার্থীদের অজ্ঞান ও মৃত্যুবরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। গ্রীষ্মকালে ছুটি থাকলে হয়তো দাবদাহে শিক্ষার্থী আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা না–ও ঘটতে পারত।

মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন সময়টাই মূলত গ্রীষ্মকাল এবং এ সময়ে গরম পড়ে সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের এই চরম বাস্তবতায় গ্রীষ্মকালে দাবদাহ আগের বছরের চেয়ে বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটি গ্রীষ্মকালেই দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাধন সরকার
শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী
সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)
শিক্ষক, লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ