‘রায়পুর-মিরগঞ্জ সড়ক, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কের গাছ অনেক আগেই কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে।’
‘রায়পুর-মিরগঞ্জ সড়ক, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কের গাছ অনেক আগেই কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে।’

প্রতিক্রিয়া

লক্ষ্মীপুরে সড়কের পাশে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার রাস্তার পাশের বেশ কয়েকটি শতবর্ষী গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। কেটে নেওয়া গাছ নিলামে তুলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন রায়পুর পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা গাছ কাটার আগে ও পরে প্রতিবাদ জানালেও সেসবের থোড়াই কেয়ার করেছেন মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা।

সারা দেশের মতো তীব্র দাবদাহে পুড়ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলাও। রায়পুর-মিরগঞ্জ সড়ক, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কের গাছ অনেক আগেই কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। সরকারিভাবে ডাল কাটার টেন্ডার অনেক সময় পরিণত হয় গাছ কাটার টেন্ডারে। শতবর্ষী রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারের নীরব তছরুপ চললেও দেখার নেই কেউ।

‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ শিরোনামে পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট তাঁর পৌর এলাকায় সুনাম কুড়ানোর চেষ্টা চালালে সেটিও যায় বিফলে।

গাছ কেটে রায়পুর শহরের তাপমাত্রা বাড়ানোর পেছনে পৌর মেয়র কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। গাছের উপকারিতা উপলব্ধি না করে গাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সেটি পরিণত হয়েছে টক অব দ্য টাউনে।

নতুন বাজারের তিন রাস্তার মোড়, বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ও মহিলা কলেজের পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে গাছ কাটায় ওই এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আগে গাছের ছায়ায় মহিলা কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনসাধারণ ও পথচারীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারলেও সেটি এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। যাতায়াতকালে চরম গরমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্করা।

সড়কের পাশের গাছ কেটে ফেলায় ছায়াহীন হয়ে পড়েছে সড়কটি। একসময়ের শীতল সড়কটি পরিণত হয়েছে তাপের স্বর্গরাজ্যে। যাতায়াতকালীন সড়কটিতে তাপের চাপে বেহাল হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পৌর এলাকার মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছেন মেয়র, এমন মন্তব্যও করছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে। অনেকে করছেন সরকারের সমালোচনাও। রাজকোষে টান পড়ায় বিক্রি হচ্ছে গাছ এমন মন্তব্যও করছেন অনেকে। জনপ্রতিনিধির এমন কর্মে কীভাবে নজরপাত করবে সরকার, সেটিও অজানা তাপে বেহাল মানুষের।

শুধু রায়পুরের নতুন বাজার কিংবা পৌর শহর নয়, পুরো জেলার সার্বিক চিত্র এটি। রাস্তার পাশের গাছ কাটা হয়েছে জেলার রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ও জেলা সদরে। রায়পুরে সীমানা পেরিয়ে জেলা সদরের সড়ক অংশে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে স্বচ্ছ আকাশের। অথচ গত বছর পাঁচেক আগেও মিলত রেইনট্রি গাছের পাতা ও ডালের দেখা। সিএনজি, বাস কিংবা অন্য যানবাহনে চড়লে আগে যেখানে গরম সহনীয় মনে হতো, সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে সহ্য করতে হচ্ছে অসহনীয় তাপদহন।

দালাল বাজার, ইটেরপুল থেকে শুরু করে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশের অন্তত ৯৫ শতাংশ শতবর্ষী গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।

সড়ক প্রশস্তকরণের নামে এসব গাছ কাটা হলেও প্রশস্তের কাজ পড়ে আছে বছরকে বছর। সরকারি বাজেট, সম্ভাব্যতা ইত্যাদি বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সড়কের উন্নয়ন হওয়া তো দূরে থাক, তার ওপর তৈরি হয়েছে তাপের চাপ গ্রহণ করার অসমর্থিত পরিস্থিতি।

একসময় রাখালিয়া এলাকায় দেখা যেত শতবর্ষী অন্তত ২০টি রেইনট্রি গাছের। যার ছায়ার নিচে বসে সময় কাটাত মানুষজন। বাস কিংবা যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করত যাত্রী সাধারণ। শীতল হাওয়ায় বসে অলস সময় পার করার ক্ষেত্রটুকু কেন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেটিও আজ অদৃশ্য উত্তরের মতো।

লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, জনপ্রতিনিধি কারও কাছেই নেই তাপ কমানোর উপায় কী—এমন প্রশ্নের সদুত্তর। দীর্ঘ সময় ধরে গাছ উজাড় করার পর ২০২৪ সালে এসেও থামেনি জেলায় গাছ কাটার মহোৎসব। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তাকে লোভ দেখিয়ে অপ্রয়োজনে গাছ কাটা হচ্ছে কি না সেটিও খুঁজে বের করা জরুরি। তাপপ্রবাহ কমানোর জন্য গাছ লাগানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনে গাছ কাটা বর্ণচোরাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এখনই সময়।

সরকারি শক্তির অপব্যবহার করে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। এমন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, গাছ কাটার একমাত্র প্রত্যক্ষ মদতদাতা সরকার।

জিহাদ হোসেন রাহাত
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর।