চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য: অভিমত

কৌশলগত নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে

আ ন ম মুনীরুজ্জামান
আ ন ম মুনীরুজ্জামান

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি কৌশলগত মেরুকরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এত দিনের বৈরিতা আরও গভীর হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটাও লক্ষণীয় যে যুক্তরাষ্ট্র একা চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইছে না। দেশটি তাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে নতুন একটা উদ্যোগের মাধ্যমে চীনকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

আমরা সবাই জানি যে এ অঞ্চলে চীনের শক্তি বাড়ছে। দেশটি নতুন প্রভাববলয় সৃষ্টিতে সচেষ্ট রয়েছে। চীন যাতে এ ক্ষেত্রে সফল না হয়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্র জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে এগোতে দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ভারতসহ চারটি দেশের অনানুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সংলাপ বা কোয়াডের যাত্রা ২০০৭ সালে হলেও মাঝে এটি স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। এ বছরের মার্চে কোয়াডের শীর্ষ নেতাদের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এটি শুধু পুনরুজ্জীবিতই নয়, এই জোট কর্মপরিধি বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে এ অঞ্চলের অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে কোয়াডের কর্মকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও কোয়াড ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের (আইপিএস) সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। আইপিএসের কাজে গতি আনতে কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আইপিএস ও কোয়াডের ভূমিকা নিয়ে চীনের যে বড় ধরনের আপত্তি রয়েছে, সেটা আমরা লক্ষ করেছি। চীনের মতে, কোয়াডের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে এবং উত্তেজনা বাড়তে পারে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা বেইজিংয়ের অবস্থানেরই ধারাবাহিকতা। তবে চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে শুধু কোয়াডের সঙ্গে জড়িয়ে যদি মন্তব্যটা করে থাকেন, তাতে আশ্চর্য হব। কারণ, বাংলাদেশ কোয়াডের সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত কেউ কোয়াডে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়নি। বাংলাদেশও কখনো কোয়াডে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেনি। এমনকি সম্প্রতি কোয়াড সম্প্রসারণের বিষয়ে যেসব লেখালেখি আর সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে সম্ভাব্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই।

তবে লক্ষণীয় যে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, ভবিষ্যতে কোয়াডের সামরিকীকরণ হতে পারে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটি এশিয়ার ন্যাটোতে রূপান্তরিত হতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত এসব কিছুই জল্পনা। তাই আমাদের এ বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কারণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বাংলাদেশ একটি সমুদ্রমাত্রিক দেশ। আর কোয়াডের কাজের মূল ক্ষেত্র হবে সমুদ্রমাত্রিক। বঙ্গোপসাগরের একটা সংবেদনশীল জায়গায় অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। তাই আমাদের এমন কোনো জোট বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ততা ঠিক হবে না, যাতে করে ভারত মহাসাগরে সামরিকীকরণ ঘটে। আমাদের কৌশলগত নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। জাতীয় স্বার্থে সব সময় আমরা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের চর্চা করব। জাতীয় স্বার্থেই বাংলাদেশ সব সময় এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট