বিকেলের পর বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

মোস্তফা কামাল। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রকৃতি ও গতিবিধি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এ বিশেষজ্ঞ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: রাফসান গালিব

মোস্তফা কামাল
প্রশ্ন

আন্দামান সাগরের লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি ও গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেবেন কী?

মোস্তফা কামাল: আন্দামান সাগরে ১৮ অক্টোবর একটি লঘু চাপ সৃষ্টি হয়েছিল যা উত্তর-পশ্চিম দিকে মানে মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে ২১ অক্টোবর নিম্নচাপে ও ২৩ অক্টোবর দিনের শুরুতে গভীর নিম্নচাপে এবং এদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

আজ সোমবার ১০.৩০ মিনিটের সময় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কেন্দ্রের অবস্থান ছিল প্রায় ২১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে। ফলে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান ছিল আজ দুপুর ১২ টার সময়।  

প্রশ্ন

ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে কখন আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন? উপকূলের কোন অংশে সেটা?

মোস্তফা কামাল: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রবর্তী কিছু অংশ খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে দুপুর ৩টার পর থেকেই অতিক্রম করা শুরু করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। বিকেল ৫টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো ও চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে শুরু করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উচ্চ গতির বাতাস উপকূলীয় এলাকার মানুষ (বিশেষ করে খুলনা ও বরিশালের) আজ দুপুর ১২টার পর থেকেই অনুভব করা শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতিবেগের বাতাস অনুভব করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

আজ সোমবার বিকেল ৫টার পর থেকেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের তথ্য অনুসারে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রশ্ন

আঘাত হানার আগে-পরে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেমন হতে পারে?

মোস্তফা কামাল: আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বৈজ্ঞানিক ও আবহাওয়াবিদদের তৈরিকৃত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের গতিপথের সর্বশেষ চিত্র অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বরিশাল বিভাগের সকল জেলা থাকতে পারে। আর চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির ব্যস প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। ফলে গভীর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কেন্দ্র বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে প্রবেশ করলেও একই সাথে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপর ভারি বৃষ্টি, ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাস, ও উচ্চ জলোচ্ছস এর প্রভাব একইভাবে অনুভূত হওয়ার প্রবল শঙ্কা রয়েছে।

বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার; ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার;  চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে (বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়) ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার, রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার এবং রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ৩০ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যেহেতু দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে তাই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে নিম্নচাপের কারণে ওইসব স্থানে পানির সমতল উঁচু হয়ে যাচ্ছে এবং সেসব স্থান থেকে সমুদ্রের পানি চট্টগ্রাম উপকূলে জমা হচ্ছে ও স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রাম উপকূলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ সকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ছোট-ছোট ঢেউগুলো একটি অন্যটির সাথে যোগ হয়ে দিনের সময় বাড়ার সাথে-সাথে ঢেউগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করবে। আজ ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে মাবস্যা হওয়ার কারণে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট, খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু এলাকা ও নোয়াখালীর চর অঞ্চলগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার প্রবল শঙ্কা দেখা যাচ্ছে।