‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবু শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্তজাগে...’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যে ঈর্ষণীয় এফআরসিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তি হেলায় ফেলে রেখে এবং বিলেতে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সেবা করার সুযোগ অবলীলায় উপেক্ষা করে একাত্তরে দেশমাতার ডাকে ছুটে গিয়েছিলেন ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে। যুদ্ধাহতদের সেবা দিতে গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন: আপনি পারতেন?
নয় মাসের যুদ্ধ শেষে তিনি আর বিলেতে ফিরে যাননি ওই ডিগ্রি নিতে। সার্জারিতে ওটা কতটা দামি তা শুধু ওই পেশার মানুষেরাই জানেন। সব কিছু ছেড়েছুড়ে নিজেকে নিয়োজিত করলেন দরিদ্র, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায়।
জনমানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সেই যে কাজ শুরু করলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার থেকে পিছপা হননি এক মুহূর্তের জন্যও। সদ্য স্বাধীন একটি দেশের উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি উদ্যোগ নিলেন। সাভারে গড়ে তুললেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্যবিমা চালু করলেন, গণবিশ্ববিদ্যালয়, গণমেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতাল—সবই ব্যতিক্রমধর্মী।
আশির দশকে ওষুধ শিল্পে আনলেন বিপ্লব। তত্কালীন শাসক এরশাদের সহায়তা ও প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলামের পরামর্শে তিনি পথিকৃতের ভূমিকা রাখলেন। স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিতে তিনি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা, সীমাহীন শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন। ওদের ঝেটিয়ে তাড়ালেন দেশ থেকে, বাঁচালেন দেশীয় ওষুধ শিল্পকে।
অবশ্য তাঁর এ কাজের বিরুদ্ধে একশ্রেণির ডাক্তার নামলেন বিরোধিতায়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সুবিধাভোগীরা জাফরুল্লাহর ওই ওষুধনীতির বিরুদ্ধে পথে নামতেও দ্বিধা করেননি। কায়েমি স্বার্থ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তাঁকে হঠাতে। কিন্তু নাহ্, তিনি বলিষ্ঠচিত্তে এগিয়ে গেছেন, অটল থেকেছেন তাঁর অঙ্গীকারে। জাতীয় ওষুধনীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বাঁচিয়েছেন দেশীয় ওষুধ শিল্পকে, তখনকার পরিস্থিতিতে অনেকেই যা কল্পনা করতে পারেনি যে, বহুজাতিক কোম্পানির বৈরিতার মুখে টিকে থাকতে পারবে আমাদের ওষুধ শিল্প।
চিকিত্সাসেবায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে দেশীয় শিল্প এই পরিকল্পনা নিয়ে জাফরুল্লাহ নিজে সাভারে গড়ে তুলেছেন গণফার্মাসিউটিক্যালস। দেখিয়েছেন কীভাবে স্বল্পমূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেয়া যায় মানুষের কাছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের—তাঁর নীতি-আদর্শের পথে হাঁটেনি দেশীয় ওষুধ শিল্প। অস্বাভাবিক মুনাফার পথে পা দিয়ে, লোভাতুর এক শ্রেণির শিল্পমালিক হাঁটলেন উল্টো পথে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শোষণ থেকে হাঁফ ছেড়ে আবার এক শ্রেণির দেশীয় শিল্পপতি মুনাফার যাঁতাকলে যেন পিষ্ট হতে শুরু করল জাতি।
এরশাদের পতন আন্দোলনের সময়ে সুযোগ ছাড়ল না স্বার্থবাদী মহল। জাফরুল্লাহকে স্বৈরাচারের দালাল বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে কত হেনস্থাই না করেছে! জাফরুল্লাহ কি ‘এক পয়সার’ সুযোগ নিয়েছিলেন এরশাদের কাছ থেকে? নিজের জন্য কোনো সুবিধা? সব প্রতিরোধের মুখে জাফরুল্লাহই টিকে ছিলেন। সসম্মানে তিনি তাঁর অবস্থানে অটল থেকেছেন।
তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তার সবগুলোর মধ্য দিয়েই তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সস্তায়, সহজে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিত্সাসেবা দেয়া সম্ভব। তিনি একটি ছোট্ট প্রকল্প নিয়েছিলেন—ভাসমান হাসপাতাল। অভিনব কিন্তু বাস্তবসম্মত। আমাদের দেশে নদীনালা, খাল-বিলের অভাব নেই। অভাব ছিল গ্রামের মানুষের জন্য চিকিত্সাসেবার। কোথাও হয়তো সড়ক ছিল, কিন্তু সড়কপথে রোগী আনা-নেয়ার উপযোগী যানবাহন ছিল না। স্বল্প দূরত্বের ভাসমান হাসপাতালে যাওয়ার নৌকার ব্যবস্থা করতে পারত সবাই।
ব্যক্তি উদ্যোগে সীমিত পরিসরে কাজ করা যায়, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে তা কি বাস্তবায়ন সম্ভব, যদি না দায়িত্ববানরা এগিয়ে আসেন। আবারও বলছি, স্বাধীন দেশের উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন না কেউ! স্বাস্থ্য খাতের মতো একটা বিশাল খাত চলল তার অতীতের ঔপনিবেশিক আমলের মতো, গতানুগতিক পথে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ভোগে খুব সাধারণ রোগে আর এসব রোগের চিকিত্সার জন্য উচ্চশিক্ষিত ডাক্তারেরও প্রয়োজন নেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত প্যারামেডিকসই যথেষ্ট। এ কথা জাফরুল্লাহ সব সময়ে বলেছেন। সর্বোচ্চ মহলকে বোঝানোর প্রয়াস চালিয়েছেন অবিরাম। কিন্তু কোনো সুফল আসেনি। কেউ তাঁর কথা কানে তোলেননি। উপেক্ষা আর অবজ্ঞা নিয়েই জাফরুল্লাহ তাঁর নিজের পথে হেঁটেছেনে।
যেখানে অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি—প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন জাফরুল্লাহ। সঠিক কথাটি বলতে কারো পরোয়া করেননি। সত্য উন্মোচনে অবিচল থেকেছেন। স্বার্থসিদ্ধির জন্য, সস্তা নাম কেনার জন্য তিনি কখনো আপস করেননি। দেশ, জাতি তথা সাধারণ মানুষের জন্য যা ভালো হবে, তা করতে তিনি নির্ভয়ে এগিয়ে যেতেন। স্বার্থান্বেষী মহলের বৈরিতার মুখে কখনও হোঁচট খেয়েছেন, তাঁকে এগোতে দেয়া হয়নি। তবু তিনি ভেতরের সত্যতা টেনে বের করেছেন। মহল বিশেষের মুখোশ খুলেছেন এবং সব ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। যেখানে অন্যায়, সেখানেই জাফরুল্লাহর প্রতিবাদী কণ্ঠ।
আজীবন সংগ্রামী। তত্ত্বের খোলসে নয়, বক্তৃতা-বিবৃতিতে শুধু নয়, কর্মে। তিনি হাতে-কলমে কাজ করে দেখিয়েছেন বাস্তবে সম্ভব। সৃষ্টিশীলতা ছিল তাঁর মেধা-মননে, মজ্জাগত। দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। সীমিত পরিসরে তা সফল করলেও এর সুফল সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব যাঁদের ছিল, তাঁরা তা করেননি। মহল বিশেষের স্বার্থের টানে এমন কাজে উদ্যোগী হননি। বৈরিতা সব সময়ে তাঁর পিছু নিয়েছে। বৈরি পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে তিনি যেন ভালোবাসতেন।
সেই ’৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে হাসপাতালের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘সংবাদ সম্মেলন’ করে তিনি তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। সেই শুরু। সাধারণ মানুষের জন্য মন-মানসিকতা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। মোক্ষম সময়টা এসে গেল একাত্তরে। আর ফিরে তাকাননি। ছুটে গেছেন দেশ হানাদারমুক্ত করতে তাঁর পেশার সাহায্য নিয়ে।
স্বাধীন দেশে গতানুগতিক নয়, বিকল্প চিকিত্সাসেবা দেয়া যে সম্ভব, তা কেউ ভাবেননি, জাফরুল্লাহর ‘পরিকল্পনা’ গ্রহণও করেননি। সে পথ গ্রহণ করলে গ্রামবাংলার বিপুল সংখ্যক গরিব রোগীকে (যারা অতি সাধারণ রোগেরও চিকিত্সা পান না, নির্ভরশীল হন গঞ্জের ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতার ওপর) বিনা চিকিত্সায় ভুগতে হতো না, মরতে হতো না। চিকিত্সক কিংবা প্রশিক্ষিত চিকিত্সাকর্মীর কাছে চিকিত্সাসেবা পাওয়ার অধিকার কি বাংলার গরিব মানুষগুলোর নেই।
চিকিত্সাসেবায় এখন রমরমা বাণিজ্য। যাদের অঢেল টাকা আছে, তারা চিকিত্সা নেন বিদেশে। যারা বিত্তহীন, সীমিত আয়ের মানুষ তারা চিকিত্সা-বাণিজ্যের খড়গে বলি হন।
বহু প্রতিষ্ঠান জাফরুল্লাহ নিজের হাতে, নিজের অদম্য উত্সাহ আর লক্ষ্য সামনে নিয়ে গড়ে তুলেছেন। আসলে তিনি তো নিজের ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর হাতে গড়া এগুলো বরং ছোট ছোট প্রকল্প বলাই বোধ হয় সঠিক হবে, যার প্রতিটিই বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব ছিল। এ কাজগুলোর জন্যও তো ‘বহু কোটি’ টাকার প্রয়োজন হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। কিন্তু এর একটি টাকাও ‘অনিয়ম’ হয়েছে এমন অভিযোগ কি তাঁর জীবদ্দশায় কেউ তুলেছেন? তোলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
নিজের জন্য তিনি কী করেছেন, কী রেখে গেছেন? বঙ্গবন্ধু সরকার থেকে তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো সরকারের কাছে কি তিনি নিজের জন্য কিছু চেয়েছেন বা নিয়েছেন? জাফরুল্লাহর সহকর্মীদের কারও সম্পর্কেও কি একটি ‘কানাকড়ি’ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কোনো দিন? এখন উঠবে হয়তো। একদিকে চলবে প্রশংসা, অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী, ছিদ্রান্বেষী মহল তত্পর হবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ‘স্বার্থ হাসিলের’ অভিযোগ তুলতে।
ধারণা করি, দরিদ্র সাধারণ মানুষকে সহজলভ্য চিকিত্সাসেবা দেবার প্রতি তাঁর কমিটমেন্ট, তাঁর কর্মময় জীবন, তাঁর সাংগঠনিক চমত্কারিত্ব, তাঁর এ সম্পর্কিত ভাবনা বিদেশে যতটা স্বীকৃতি পেয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে, স্বদেশে হয়েছে ততটাই উপেক্ষিত। বিশ্বখ্যাত ‘ল্যানসেট’ ম্যাগজিনে তাঁর কর্ম-ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ, জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এ সম্পর্কিত বক্তব্য এবং এশিয়ার বিকল্প নোবেল পুরস্কার নামে পরিচিত ‘ম্যাগসেসাই পুরস্কার’ লাভ তাঁর জীবনের উজ্জ্বল কয়েকটি দিক।
ঢাকার ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের ‘ডায়ালিসিস সেন্টার’ তাঁর অন্যতম কীর্তি। গরিবদের বিনামূল্যে, নিম্নবিত্ত বা সাধারণ মধ্যবিত্তকে অতি অল্প খরচে এবং এক সঙ্গে শতাধিক মানুষকে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা এক কথায় অনন্য।
আমরা ছিলাম জাফরুল্লাহর সামসাময়িক। তিনি ছিলেন মেডিকেলে, আমরা ঢাবিতে। ষাটের দশকের আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। সে সময়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন একটিই ছিল। ছাত্রআন্দোলনও এই ছাত্র সংগঠনের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ছিল মেডিকেল কলেজ। এই সংগঠনের এক ‘সংকটকালে’ তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
শুধু তা-ই নয়, ওই কেন্দ্রে তিনি নিজেও ডায়ালিসিস করাতেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত ওই সেন্টারেই ডায়ালিসিস করিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন সাধারণ গরিব মানুষের জন্য যে চিকিত্সাসেবা, তাঁর জন্যও একই ব্যবস্থা। এখানে ধনী-গরিব, নিম্নবিত্ত-উচ্চবিত্তের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আর এটাই ছিল তাঁর সারা জীবনের কমিটমেন্ট, তাঁর আজীবন স্বপ্ন। এই স্বাপ্নিক মানুষটি শুধু তাঁর স্বপ্নের কথা বলেননি, অন্যকে শোনাননি, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও তিনি তাঁর ‘স্বপ্ন পূরণ’ করে দেখিয়েছেন, সম্ভব।
জাফরুল্লাহর মূল্যায়ন আমরা করিনি, তাতে তাঁর কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা ‘তুচ্ছ’ হয়েছি। সাধারণ মানুষ হয়েছে স্বল্পমূল্যে চিকিত্সাবঞ্চিত। আগেই বলেছি, যেখানে অনিয়ম, অবিচার, দুর্নীতি, সেখানেই জাফরুল্লাহর উচ্ছ্বসিত প্রতিবাদী কণ্ঠ। কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না হয়েও সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন কিংবা ঘরোয়া আলোচনা বা বিবৃতি প্রদান—সর্বত্রই তাঁর ডাক পড়ত। প্রতিবাদ করার সুযোগ পেলেই তিনি সানন্দে ওইসব কর্মকাণ্ডে যোগ দিতেন। এটাই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। বিবেকের কণ্ঠস্বরকে তিনি এভাবেই তুলে ধরতেন।
আমরা ছিলাম জাফরুল্লাহর সামসাময়িক। তিনি ছিলেন মেডিকেলে, আমরা ঢাবিতে। ষাটের দশকের আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। সে সময়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন একটিই ছিল। ছাত্রআন্দোলনও এই ছাত্র সংগঠনের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ছিল মেডিকেল কলেজ। এই সংগঠনের এক ‘সংকটকালে’ তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি আজীবন বামপন্থী ছিলেন এবং এই চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্যুত হননি কোনোদিন। ইচ্ছে করলেই তিনি রাজনীতি করতে পারতেন, এমনকি ক্ষতার রাজনীতিও। কিন্তু মানুষের সেবার মাধ্যম হিসেবে চিকিত্সাবিজ্ঞানকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই বিজ্ঞানেই নিবিষ্ট ছিলেন।
অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, ব্যতিক্রমী স্বাপ্নিক, সাহসী ও আপসহীন এই মানুষটি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি তাঁর কীর্তিকে ছাড়িয়ে গেছেন, এই তাঁর মহত্ত্ব, সৌন্দর্য, তাঁর মানবিকতা। আজীবন যোদ্ধা জাফরুল্লাহ তাঁর নীতি-আদর্শের মধ্যে বেঁচে থাকবেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মধ্যে। তাঁর আজকের তরুণ পেশাজীবীরা কি তাঁর আপসহীনতা, তাঁর মানবিক মূল্যবোধ এবং তাঁর সাধারণ মানুষকে স্বল্পমূল্যে চিকিত্সাসেবা দেবার দৃষ্টান্ত থেকে প্রেরণা নেবেন?
রবীন্দ্রনাথের দুটি লাইন উদ্ধৃত করে শেষ করছি এই লেখা:
‘...এসেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।’
জাফরুল্লাহর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
আবদুল হালিম অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক