অবিভক্ত ভারতে সিলেটের করিমগঞ্জের বদরপুরে শহীদ অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দীন আহমেদের জন্ম।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে এমবিবিএস পাস করে তিনি ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর প্রথমে কুমিল্লা ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক ও শিক্ষকতা শুরু করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। বারবার রাজনীতি করার আহ্বান সত্ত্বেও নিজের একমাত্র চিন্তা ছিল—চিকিৎসাব্যবস্থা এবং সব ধরনের মানবিক সেবা প্রদান।
১৯৫৫ সালে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়ে গড়ে তোলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ত্রাণ সংগঠন ‘পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর’। ঠিক সেই সময় পুরো দেশ যখন জলমগ্ন, তখন পূর্ব পাকিস্তান সরকার তরুণ চিকিৎসক শামসুদ্দীন এবং তাঁর সংগঠনকে বন্যার্ত মানুষদের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব দেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী চিকিৎসকদের নিয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়েন পুরো দেশের বন্যাকবলিত এলাকায়।
১৯৫০ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী ও স্বদেশি আন্দোলনের নেত্রী বেগম জোবাইদা রহিম সিলেট থেকে ঢাকায় গিয়ে ডা. শামসুদ্দিনকে বলেন ‘দেশ তো স্বাধীন করেছ; কিন্তু মেয়েদের উচ্চশিক্ষা দিতে হবে। তোমার স্ত্রী হোসনে আরা ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। তোমার স্ত্রীকে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। সিলেট মহিলা কলেজ বেসরকারিভাবে চালু করতে হবে, তবে এখন তাকে রিকশা ভাড়াও দিতে পারব না।’ সেই সময় হোসনে আরা পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম দুটি শিশুসন্তানকে নিয়ে মাত্র পাঁচ ছয়জন ছাত্রী আর ছোট ভাড়া করা ঘরের মহিলা কলেজে যোগ দিলেন।
৩২ বছরের বেশি, তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটা সময় আর মেধা দিয়ে শহরের মাঝখানে ১২ বিঘা জমির ওপর সুন্দর স্থাপনা এবং মেয়েদের হোস্টেলসহ একটি সম্মানীয় বিদ্যাপীঠ উপহার দিয়ে গেলেন। ডা. শামসুদ্দিন তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে চাকরির জন্য বদলি হতেন এবং ১৯৫৮ সালের দিকে বিলেতে গিয়ে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬২ সালে রাজশাহীর নতুন মেডিকেল কলেজে যোগ দেন। সেখানেও তাঁর উচ্চমানের চিকিৎসা এবং মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন সমাজ গড়ার কাজে ব্যস্ত থাকতেন।
সিলেটে মহিলা কলেজ সামাল দিতে তিন মেয়েসহ ডা. শামসুদ্দিনের স্ত্রীর সিলেটেই থাকতে হতো; আর দুই ছেলেকে নিয়ে রাজশাহীতে ডা. শামসুদ্দীনের থাকাই ছিল তাঁদের জীবন। শুধু রমজানের ছুটিতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে হতেন। সিলেটে মেডিকেল কলেজ তখনও নতুন এবং অধ্যাপকের পদ না থাকায় তিনি (১৯৬৪–১৯৬৭) সিভিল সার্জন হয়ে সিলেটে আসেন। এই কয়েকটি বছরই তাঁদের জীবনে পুরো পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে থাকার দীর্ঘতম স্মৃতি।
শহীদ ডা. শামসুদ্দীনের সঙ্গে অধ্যক্ষ হোসনে আরার কথা চলেই আসে। সিলেটের ইতিহাসে নারীশিক্ষা শুধু নয়, সম্মান ও নারী নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দীর্ঘ ৩২ বছর সবচেয়ে বড় অবদান রেখে গেছেন হোসনে আরা। ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ সব সময় তাঁকে অনুপ্রেরণা আর সহায়তা করে গেছেন।
সিলেটে থাকার সময় ডা. শামসুদ্দীন সব পেশার মানুষদের নিয়ে বৈঠক করতেন। তাই গড়ে তুলতে পেরেছিলেন জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে চিকিৎসকদের সংগঠিত করেন; আর প্রথমবারের মতো সিলেটে বিশাল পরিসরে জাতীয় কনভেনশন করেন।
১৯৬৫ সালের রমজান মাসে মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে ৫০০ রোগীর চোখের ছানি বিনা মূল্যে অপারেশন করেন। সমগ্র পাকিস্তানে এটির দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। সিলেটের টিবি ক্লিনিককে হাসপাতালে রূপান্তর করলেন। লন্ডনে প্রবাসীরা বিনা দ্বিধায় অর্থ প্রদান করলেন।
১৯৬৮ সালে ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ আবার যখন রাজশাহীতে বদলি হন, তখন চলছে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে হটানোর ’৬৯–এর গণ–আন্দোলন। পাকিস্তানি সেনারা ছাত্রদের মিছিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যা করে। ডা. শামসুদ্দিন দীর্ঘ সময় ধরে অস্ত্রোপচারসহ অনেক চেষ্টা করেও শামসুজ্জোহাকে বাঁচাতে পারেননি।
পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা তাঁকে অসাবধানবশত ছোড়া গুলি লেগে তিনি মারা গেছেন বলে লিখে দিতে হুকুম করেন। এর তীব্র প্রতিবাদ করেন ডা. শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, তোমরা তাঁকে কাছ থেকে কয়েকবার গুলি আর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছ, আর অনেক দেরিতে হাসপাতালে এনেছ—এটি আন্তর্জাতিক এবং মানবতাবিরোধী কাজ।
শুধু তা–ই নয়, তিনি পুরো রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমে তৎক্ষণাৎ প্রচার করেন।
একজন শিক্ষককে অমানবিকভাবে হত্যা করার এই রিপোর্ট স্তিমিত আন্দোলনকে পূর্ব পাকিস্তানে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেয়।
আইয়ুব খানের পতন ঘটে এবং ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন। এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে থাকে এবং আগরতলা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি হয়। তারপর ’৭০–এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ বিজয় আর তারপর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণতন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকতা করে গণহত্যা শুরু করে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগেই ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ তৈরি করেছিলেন ইমার্জেন্সি টিম, ব্ল্যাড ব্যাংক।
রক্তপাতের ঘটনা ঘটতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা গণহত্যা শুরু করল, তখন অনেক চিকিৎসক যুদ্ধের ভয়াবহতায় শহর ছেড়ে চলে যান।
এপ্রিলের ৩ তারিখ দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনারা সিলেট দখল করেন; কিন্তু কম সৈন্যের জন্য তা ধরে রাখা যায়নি। এপ্রিলের ৯ তারিখ পাকিস্তানি সেনারা আবার সিলেট দখল করে।
এই কয়েক দিন কারফিউয়ের মধ্যে আহত রোগী ভর্তি সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আগলে রাখেন সবচেয়ে প্রবীণ এবং সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে থেকে গেলেন তাঁর স্নেহের কনিষ্ঠ চিকিৎসক শ্যামল কান্তি লালা, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী, পুরুষ নার্স মাহমুদুর রহমানসহ কয়েকজন। তাঁরা সমস্বরে বললেন, যতই ভয়াবহ সময় হোক ,আমরা আপনাকে ছেড়ে যাব না। আগের দিন মুক্ত সিলেটে তিনি এক বিদেশি টিভিতে বক্তব্য দিয়ে হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখিয়ে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানান।
ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তাঁর সদ্য বিবাহিত মেয়ে, জামাতা, চার সন্তান এবং বৃদ্ধ মাকে রণকেলী গ্রামে পাঠিয়ে দেন। ছোট ছেলে এপ্রিলের ২ তারিখে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চলে গেছেন। তিনি স্ত্রীকে বললেন—‘আমাকে তো থাকতে হবে, তুমিও থেকে যাও যদি নার্সিংয়ে সহায়তা লাগে।’ ইতস্তত করে তিনি বলেন, তা ছাড়া আমাদের ছেলেটিও তো যুদ্ধাহত হয়ে আসতে পারে।
২ এপ্রিল পাকিস্তানিরা তাঁদের ব্যাটালিয়নের বাঙালি ক্যাপ্টেন মাহবুব ও ডা. লেফটেন্যান্ট সৈয়দ মাইনুদ্দিনকে গুলি করে হাসপাতালে ফেলে গেল। ক্যাপ্টেন মাহবুবকে বাঁচানো গেল না। কিন্তু ডা. মঈন বেঁচে গেলেন। তাঁকে তিনি গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন। ডা. মঈনুদ্দিন অনুনয় করে বললেন, ‘আপনাকে তারা মেরে ফেলবে, আপনি থাকবেন না দোহাই আপনার। আমি তাদের ডাক্তার ছিলাম, আমাকে যদি গুলি করতে পারে, তাহলে আপনাকে তারা মারবেই।’
মৃদু হেসে ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার কাজে যাও, আমার তো রোগীভর্তি। যুদ্ধের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া যাবে না।’
পরদিন থেকেই যুদ্ধ বাড়তে থাকল। ৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা হাসপাতালে ঢুকে অপারেশন রুম থেকে ডা. শামসুদ্দীন আহমেদসহ কয়েকজনকে বের করে হাসপাতালের ভেতরে গুলি করে হত্যা করে। তিন দিন পর কারফিউ শিথিল হলে তাঁর চাচা এবং আরও কিছু মানুষ হাসপাতাল অঙ্গনেই ডা. শামসুদ্দীন আহমেদকে কবর দেন।
তার আগে এপ্রিলের ২ তারিখ। আমি প্রথম বর্ষ মেডিকেলের ছাত্র আর সালাম ঢাকার ছাত্র—মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাসায় একটি চিরকুট লিখে বেরিয়ে পড়লাম। বিয়ানী বাজারে গিয়ে দেখলাম, দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য সিলেট আক্রমণ করতে যাচ্ছে। সেখানে কর্নেল (অব) আবদুর রব (যিনি সংসদ সদস্য এবং পরে কর্নেল ওসমানীর চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন) আমাদের এই মুহূর্তে তেলিয়াপাড়া যেতে বললেন।
সেখানে চা–বাগানে ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল সমর নায়কদের প্রথম বৈঠক। কর্নেল ওসমানীকে প্রধান বানিয়ে যুদ্ধের সেক্টর ভাগ করা হলো। আমরা সেক্টর–৩ । বিদ্রোহী দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর সফিউল্লাহর অধীন সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রাথমিক গ্রেনেড আর সাবমেশিনগান ট্রেনিং দিয়ে মাধবপুর যুদ্ধে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলাম। প্রচণ্ড চাপে আমাদের সদর দপ্তর মাধবপুরের কাছে ভারতের বর্ডারের ভেতর আগরতলার সিমনা গ্রামে স্থানান্তরিত হয়।
আমরা লেফটেন্যান্ট হেলাল মুর্শেদের ডাকে ১৫ জনের সেনা দলের একটি ফাইটিং প্লাটুনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনবরত অভিযান চালাতে লাগলাম। মাস তিনেক পর একদিন ক্যাম্পে একজন পায়ে প্লাস্টার করা সৈনিক এগিয়ে এল, বলল আপনার বাবা ডা. শামসুদ্দিন যুদ্ধাহত আমাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন যেন আবার যুদ্ধে ফিরতে পারি। তিনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। হঠাৎ ‘ভালো মানুষ ছিলেন’ শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
দেখলাম, সালাম, অধিনায়ক মেজর সফিউল্লাহসহ আর অন্যরা সবাই জানেন; কিন্তু ঠিক করেছেন আমাকে বলবেন না। এই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চিত্র।
শহীদ শামসুদ্দিনের নামে হাসপাতাল আর ছাত্র হল হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত চিকিৎসক আর মানুষের উদ্যোগে। তাঁদের কবরটি বাঁশের বেড়ায় ঘেরা পরিত্যক্ত ছিল অনেক বছর। পরে পরিবারের উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সম্মান জানাতে আসেন অনেকে। দুই বছর আগে সিলেটের মেয়র কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন; তবে পরিবারের ফলকটি উঠিয়ে নিলেন।
একবার ঢাকার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য শহীদ শামসুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করে আবেদন করল, তখন নির্বাচন কমিটির প্রধান ছিলেন সিলেটের সিনিয়র মন্ত্রী। তিনি সেই আবেদন বিবেচনায় নেননি, তবে নিজেই একবার স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়েছেন। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়নি; কারণ, এই আত্মত্যাগ এত বিশাল যে এত দিন পরে একটি পদক দিয়ে দায়মুক্ত করা অসম্মানই মনে হতো।
তবে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আজ শুধু দেশে নয়, তাঁর আত্মত্যাগ অনুসরণ করে তাঁরই উত্তরসূরি নাতনি, আমার মেয়ে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া ও লেখাপড়া করা ডা. নাহরীন আহমেদ কাজ করে যাচ্ছে। তারই অনুপ্রেরণায় আজ সে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ ও ধ্বংসের দেশ ও মানুষের সহায়তা করে যাচ্ছে।
ডা. নাহরীন আহমেদ আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ক্রিটিক্যাল কেয়ার আর পালমোনারি মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক।
মেডগ্লোবাল নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর মেডিকেল ডিরেক্টর। এই মুহূর্তে সে জীবন বাজি রেখে তাঁর দল নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভয়ানক যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে গাজায় হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিচ্ছে। আর সব বাধা আর ভয় তুচ্ছ করে সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এর সত্যতা আর ভয়াবহতা প্রচার করছে। তার আগে সে চিকিৎসাসেবার জন্য জন্য যুদ্ধরত ইয়েমেন, সুদান ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে আহত মানুষের কাছে দল নিয়ে ছুটে গেছে।
বাংলাদেশে সে বহু আইসিইউ চিকিৎসককে ট্রেনিং দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার দল হাসপাতাল চালাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর টিম নিয়ে সে ছয়বার সহায়তা দিয়ে এসেছে। ইউক্রেনের সার্জনরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি কি ভয় পাও না? এই যুদ্ধের সময় আমেরিকার নিশ্চিত জীবন ছেড়ে এখানে তুমি কেন এসেছ? তোমার অনুপ্রেরণা কী?
নাহরীন উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি আমার দাদাভাইকে কোনো দিন দেখিনি; কিন্তু তাঁর রক্ত আমার ভেতরে রয়েছে। তিনি ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যেও জীবনের মায়ায় রোগীভর্তি হাসপাতাল ছেড়ে যাননি।’ ইউক্রেনের সার্জনরা আপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিলাম, আমরাও তোমার দাদা ভাইয়ের মতো প্রাণের ভয়ে আমাদের হাসপাতাল ত্যাগ করে কোনো দিন যাব না।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিনের জীবনের কথা জানতে পারলে বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকেরা নিশ্চয় নিজেদের বিশাল ঐতিহ্যের কথা জানতে পারবেন; আর বাংলাদেশে আজ চিকিৎসার যে অচলাবস্থা, তা নিরসনে একটি মানবিক এবং নৈতিক পরিবর্তন আনতে উৎসাহিত হবেন। দেশটি তো এমনিতেই স্বাধীন হয়নি, আমাদের দুঃখের যেমন ইতিহাস আছে, তেমনি আছে পরম গর্বেরও ইতিহাস।
ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ অধ্যাপক মেডিসিন এবং কিডনি বিভাগ, টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়া, আমেরিকা