জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিচারের জন্য অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ সংশোধন করা হয়েছে। অধ্যাদেশে প্রবর্তিত অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানানো উচিত। তবে এ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা ও বিশ্বাসযোগ৵তা নিশ্চিত করতে কেন আরও পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে লিখেছেন ডেভিড বার্গম্যান
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর সংশোধনীসংবলিত অধ্যাদেশটি প্রকাশিত হয়েছে। যাঁরা ন্যায্য ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারে আগ্রহী, তাঁদের আনন্দিত হওয়ার মতো এতে অনেক কিছু আছে। সেই সঙ্গে কিছু আছে হতাশ হওয়ার মতোও।
নতুন অধ্যাদেশের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক কী আছে, সেদিকে তাকানোর আগে সংশোধনীতে ঘাটতি থেকে যাওয়া উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাপারের দিকে জোর দেওয়া দরকার। আর তা হলো, এখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে।
সরকার যদি বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা চায়, তাহলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার এ সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী ফল হবে নেতিবাচক।
প্রথমত, এর অর্থ হলো সরকার ও ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘ বা কোনো ইউরোপীয় দেশ থেকে কোনো সাহায্য পাবেন না। পেলেও তা হবে খুবই সীমিত।
দ্বিতীয়ত, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সময় সংগ্রহ করা কোনো প্রমাণ জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের কাছে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তৃতীয়ত, অনেক আন্তর্জাতিক আইনজীবীর বিচারকাজে প্রসিকিউশনকে সহায়তা করার সম্ভাবনা ছিল, তাঁরা এখন এতে অংশ নিতে অনিচ্ছুক হতে পারেন।
চতুর্থত, এর ফলে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এখন বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে সরকারের যৌক্তিকতা কী? সরকার বিশ্বাস করে, দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর (প্রাথমিকভাবে ছাত্র ও প্রধান রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামী) পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জন-অভিপ্রায় মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে।
■ সরকার যদি বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা চায়, তাহলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী ফল হবে নেতিবাচক। ■ আইনি পরিবর্তনগুলোর ফলে নির্দিষ্ট কিছু পরিভাষা, যেমন ‘বলপূর্বক গুম’ ও ‘আক্রমণ’ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির সঙ্গে অভিন্ন হয়েছে। ■ ধারা ১০-এ ‘জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার’ প্রতিনিধিদের আইসিটি কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন।
সরকার মনে করে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান অপসারণের কোনো চেষ্টা করলে তার ওপর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ‘নমনীয়’ হওয়ার অভিযোগ আসবে এবং এমন কোনো দাবি অত্যন্ত নেতিবাচক রাজনৈতিক পতন ঘটাবে।
যাহোক, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা নিয়ে জনগণের বা রাজনৈতিক দলগুলোর মেজাজ সম্পর্কে সরকারের উপলব্ধি যে যথার্থ, তা নিশ্চিত করে
বলা যায় না। আর তা সঠিক হলেও সরকার এই বিচারে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে কোনো জনসংলাপ করার চেষ্টা করেনি। এই দণ্ড অপসারণই যে বিচারকে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়, এ কথা বোঝানোরও কোনো চেষ্টা হয়নি।
সরকার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত ঘোষণা করতে পারে—এ বিষয় আলোচিত হয়েছে। তবে তা করার মাধ্যমে সরকার যদি উল্লেখযোগ্য সুবিধা অর্জন করতে চায়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো সময়ে নয়, এখনই সেই ঘোষণা করার সময়। আর এর সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা করা।
আপাতত আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি একদিকে রাখি। নতুন অধ্যাদেশে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আছে। সেগুলো যাচাই করে তারপর আমরা বিবেচনা করব যে সরকার কোন পরিবর্তনগুলো করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রথমটি অপরাধের সংজ্ঞা ও প্রয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
১৯৭৩ সালের আইসিটি আইনের প্রধান সমস্যাগুলোর একটি ছিল, এ আইনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও জেনোসাইডের (গণহত্যা) অপরাধের যে সংজ্ঞা, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে না। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে এ আইন নির্দিষ্ট করেনি যে হত্যাগুলোকে ‘কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক বা পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হতে হবে’ এবং ‘অভিযুক্তদের আক্রমণ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা’ প্রয়োজন।
আর জেনোসাইড অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে আইনে ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত ছিল, অর্থাৎ রাজনৈতিক গোষ্ঠী গণহত্যার শিকার হতে পারে আইনের অধীন; যদিও অপরাধটির আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা তা অনুমোদন করে না। এখন নতুন অধ্যাদেশের ধারা ৪ এই অপরাধগুলোর সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করেছে।
আইনি পরিবর্তনগুলোর ফলে নির্দিষ্ট কিছু পরিভাষা, যেমন ‘বলপূর্বক গুম’ ও ‘আক্রমণ’ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির সঙ্গে অভিন্ন হয়েছে। আর ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ‘এলিমেন্টস অব ক্রাইমস’ নামে পরিচিত একটি আইসিসি নথি ‘বিবেচনা করবেন’।
আইনটির অনুচ্ছেদ ৫ রোম সংবিধির ২৩ অনুচ্ছেদের ভাষাও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই অংশে বলা আছে, কীভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘নির্দেশ দেওয়া’, ‘উসকানি দেওয়া’, ‘প্ররোচিত করা’, ‘উত্তেজিত করা’, ‘সহায়তা করা’ বা কোনো অপরাধে অংশগ্রহণ করার জন্য দায়বদ্ধ করা যেতে পারে বা ‘কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য চরিতার্থে’ দলবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য কাউকে দায়বদ্ধ করা যেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য এসব পরিবর্তন অপরাধগুলোকে আন্তর্জাতিক মান ও নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে। সেই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য ট্রাইব্যুনালের ঠিক কী প্রমাণ করা দরকার, তা বোঝার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও বিবাদীপক্ষ উভয়ের জন্য আরও বেশি নিশ্চয়তা ও স্পষ্টতা প্রদান করে।
পরিবর্তনের দ্বিতীয় ধরন হচ্ছে ‘প্রমাণ’। ১৯৭৩ সালের আইনে কোনো প্রমাণ দাখিল করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল বিবাদী বা রাষ্ট্রপক্ষকে সেই দাখিলকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ না দিয়েই।
নতুন অধ্যাদেশের ধারা ১৬ বিবাদী বা রাষ্ট্রপক্ষকে প্রমাণের দাখিলযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেয়, যদি তারা বিশ্বাস করে যে দাখিল করা প্রমাণটির ‘কোনো তাৎপর্যপূর্ণ’ মূল্য নেই অথবা এটি ন্যায্য বিচার বা সাক্ষীর সাক্ষ্যের ন্যায্য মূল্যায়নে পক্ষপাত ঘটাবে। প্রমাণসংক্রান্ত এ পরিবর্তন আইসিটি আইনকে আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতির সঙ্গে আরও সংগতিপূর্ণ করেছে।
এর পাশাপাশি ধারা ১২ প্রসিকিউটরের ওপর একটি বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। তা হলো প্রসিকিউটরের কাছে থাকা এমন কোনো প্রমাণ প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা, যে প্রমাণ ‘অভিযুক্তের নির্দোষ প্রদর্শন বা অভিযুক্তের দোষ প্রশমিত করে বা যা রাষ্ট্রপক্ষের প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে’। এটি একটি আন্তর্জাতিক মান; কিন্তু এই সংশোধনীর আগে দোষ স্খলন করে—এমন কোনো প্রমাণ প্রদর্শনের আবশ্যকতা আইসিটি প্রসিকিউটরদের ওপর আরোপ করেননি।
তৃতীয় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে অভিযুক্তদের নতুন কিছু অধিকারের বিধান নিয়ে। অধ্যাদেশের ১৫ ধারায় অভিযুক্তদের বেশ কয়েকটি অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য সময় ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা এবং অভিযুক্তদের নিজের পছন্দে নিযুক্ত কৌঁসুলির সঙ্গে অবাধে ও গোপনীয়তার সঙ্গে করে পরামর্শ করা’।
ধারা ৭ বিবাদীপক্ষকে ‘অতিরিক্ত সাক্ষীদের ডাকতে বা বিচারের যেকোনো পর্যায়ে আরও প্রমাণ উপস্থাপন করার’ অনুমতি দেয়।
চতুর্থ ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্যে আছে প্রক্রিয়া–সম্পর্কিত একগুচ্ছ বিধান। অধ্যাদেশের ধারা ১১-তে খুব গুরুত্বপূর্ণ নতুন একটি বিধান আছে। সেখানে ট্রাইব্যুনালকে ‘বিদেশি কাউন্সেলকে তাঁর সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার’ অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিবাদী ও প্রসিকিউশন উভয়কে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনে অভিজ্ঞ বিদেশি কাউন্সেল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার এই বিধান যুক্তিতর্ক ও বিচারের মান উভয়ের ওপর খুব ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
এ ছাড়া ধারা ১০-এ ‘জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার’ প্রতিনিধিদের আইসিটি কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন। কারণ, এর আগপর্যন্ত এই প্রতিনিধিরা কেবল ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রারের বিবেচনার ভিত্তিতে মাঝেমধে৵ যোগ দিতে পারতেন।
এ ছাড়া অধ্যাদেশের ১৯ ধারা নতুন কিছু বিধানও তৈরি করেছে। সেখানে আছে, ট্রাইব্যুনালকে সাক্ষীদের ‘নিরাপদে থাকা, নিরাপত্তা ও মঙ্গল নিশ্চিত করার জন্য সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে হবে এবং ভিকটিমকে কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার দিতে হবে, ‘যেখানে তাঁরা অথবা তাঁদের পরিবার এমন অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা প্রসিকিউশনের বিপরীত’। এগুলোর সব কটি ইতিবাচক।
অধ্যাদেশটি স্পষ্টভাবে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নতুন পরিবর্তন এনেছে, যা ১৯৭৩ সালের আইসিটি আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছে। তবু মৃত্যুদণ্ডের ইস্যুর মতোই নতুন অধ্যাদেশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসেনি, যা হওয়ার দরকার ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
১. ট্রাইব্যুনালের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়ে অন্তর্বর্তী (ইন্টারলোকিউটরি) আপিলের সঠিক প্রক্রিয়া। অর্ডিন্যান্স শুধু আদালত অবমাননার অপরাধের সাপেক্ষে এর অনুমতি দেয়।
২. অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচারের পরে দোষী সাব্যস্তদের ট্রাইব্যুনালের সামনে তার উপস্থিতিতে পুনরায় বিচার করার অধিকার প্রদান করা। বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা নিশ্চিত করতে এই অধিকার প্রয়োজন।
৩. আইসিসি রোম সংবিধির ভাষার সঙ্গে সাযুজ্যের জন্য ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’-সংক্রান্ত অংশটি সংশোধন করতে ব্যর্থতা।
৪. নতুন অধ্যাদেশে এই ‘ফ্যাক্টস অব কমন নলেজ’ কী, তা সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে রুল দেওয়ার আগে প্রসিকিউশন ও বিবাদী উভয়কেই ট্রাইব্যুনালে মতামত উপস্থাপনের সুযোগ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা।
৫. ১৯৭৩ সালের আইন থেকে সেই বিধান অপসারণ করা, যেখানে ট্রাইব্যুনালকে ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদন’ বিচারিক নোটিশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশে প্রবর্তিত অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানানো উচিত। তবে এ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা ও বিশ্বাসযোগ৵তা নিশ্চিত করতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। স্বীকৃত ন্যায্য মান মেনে চলতে ব্যর্থ হলে নিঃসন্দেহে ট্রাইবু৵নালের ওপর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। তা এড়াতে হলে আরও পরিবর্তন প্রয়োজন।
●ডেভিড বার্গম্যান সাংবাদিক। বহু বছর ধরে আইসিটির বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখছেন। তাঁর এক্স হ্যান্ডল @TheDavidBergman