রফিক, তোমার রক্তের মূল্য দিতে পারলাম না!

পৃথিবীতে শুধু একটি ভাষায় আছে, যে ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা। আর সেটি হলো আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ভাষার জন্য প্রাণ দিতে পারা এটি শুধু বাঙালিদের পক্ষেই সম্ভব।

বাংলা আমার মাতৃভাষা আর আমি নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে পারি এ জন্য আমি সত্যিই গর্বিত। বাংলা ভাষার মতো মিষ্টতা আমি আর অন্য কোনো ভাষাতেই পাইনি। কিন্তু আমার দেশে আমার মাতৃভাষার এত অপমান, অসম্মান আমি সহ্য করতে পারছি না।

আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষাকে গলা টিপে মেরে ফেলছি। বর্তমানে রাস্তায় বের হলে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনের কাগজ দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো অধিকাংশই ইংরেজি ভাষাতে লেখা। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, হাসপাতালের নাম, রেস্তোরাঁ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম, সংগঠনের নাম অধিকাংশতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এখানে ইংরেজি ভাষা এতটাই প্রচলিত হয়ে গিয়েছে যে, বাংলা ভাষার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের নামগুলো বর্তমানে ইংরেজিতেই বেশি প্রচলিত। আধুনিক যুগের অধিকাংশ মানুষ বিভাগের নাম বাংলাতে বললে বুঝতে পারে না। আবার যারা বিভাগের নাম বাংলাতে বলে তারা নাকি আধুনিক নয়।

একদিন গ্রামের মধ্যে একটু ঘুরছিলাম। এ সময়ে এক চাচা আমার পড়ালেখা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন। তাঁর প্রশ্নের জবাবে বললাম, আমি সমাজকল্যাণ বিভাগে পড়ালেখা করি। এ কথা শুনে তাঁর মুখভঙ্গি সত্যিই দেখার মতো ছিল না। অবস্থা বুঝে আমি তাকে বললাম যে, আমি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টে পড়ালেখা করি। এবার চাচা খুশি হয়ে আমাকে আরও আধুনিক হতে বললেন।

বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়ে থাকি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মিট আপ, ওরিয়েন্টেশন, ফেয়ারওয়েল, রিইউনিয়ন ইত্যাদি। এগুলোর যে কত সুন্দর বাংলা অর্থ আছে সেগুলো অনেকেরই অজানা। বাঙালি হয়ে এসব বিদেশি নামের অনুষ্ঠানে যুক্ত হতেও যথেষ্ট অস্বস্তি হয়।

প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ওই দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণে যেসব গান বাজানো হয়, অনেক সময় সেখানে থাকে বাংলা ভাষার কোনো গান।

যে ভাষার জন্য রফিক, শফিক, জব্বার রক্ত দিলেন, সেই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কি সত্যিই সেই আগের বাঙালি আছি, নাকি মিথ্যা পরিচয় বহন করে বেড়াচ্ছি!

মো. সাকিব আল হাসান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়