বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যার রাজধানীর প্রধান সড়কে রিকশা চলতে পারে। রিকশা যদিও যানজটের একমাত্র কারণ নয়, তবে অন্যতম কারণ নিঃসন্দেহে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে এবং তারা ইতিমধ্যে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, যাতে বড় সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।
ঢাকার ভয়াবহ যানজটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়। লাখ লাখ মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট নয়। যানজট না হলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেড়ে যেত, শিল্প–বাণিজ্যে আরও বিনিয়োগ ও বেকার জনগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক খাতে শোভন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো।
ঢাকা শহরকে ক্রমান্বয়ে রিকশামুক্ত করাও প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, এ দেশে বিশাল এক জনগোষ্ঠীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরির ব্যবস্থা নেই। শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদি খাতের চাহিদার তুলনায় শ্রমবাজারে জোগানের পরিমাণ অনেক বেশি, তাই সারা দেশের গ্রামাঞ্চলের বহু প্রান্তিক মানুষ ঢাকায় এসে বেঁচে থাকার তাগিদে রিকশা চালনার পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। কয়েক লাখ রিকশাচালক আছে এই ঢাকার শহরে। হঠাৎ রিকশা চালনা বন্ধ করে দিলে তারা কোথায় যাবে?
তাই এই রিকশামুক্ত ঢাকা কীভাবে করা যায়, সেটা একটা বিরাট সমস্যা বটে। এর জন্য প্রয়োজন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, নানা শ্রমিক ফেডারেশন, ছাত্রসমাজ, পেশাজীবীদের নিয়ে, অর্থাৎ সব অংশীজনকে নিয়ে আলোচনার। আবার যে রাস্তায় একবার বন্ধ করা হবে, সেটা যেন আর কোনো দিন খুলতে না হয়, সেভাবে এগোতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ভালো হবে একটু সময় দিয়ে প্রথমে দুটি প্রধান রাস্তা বন্ধ করা, যে দুটি অনেক আগেই বন্ধ করা হয়েছিল; একটি এয়ারপোর্ট রোড, শাহবাগ পর্যন্ত এবং অন্যটি মিরপুর রোড। তারপর কয়েক মাস সময় দিয়ে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন হয়ে প্রেসক্লাব, মতিঝিল পর্যন্ত। ওই দিকে মগবাজার রোড। যেহেতু ঢাকা শহর প্রতিনিয়ত আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, চারদিকে নতুন নতুন রাস্তা হচ্ছে, তাই রিকশাচালকদের উৎসাহিত করতে হবে সেদিকে সরে যাওয়ার জন্য। এভাবে কিছুটা সময় দিয়ে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা স্থায়ীভাবে রিকশামুক্ত ঘোষণা দিয়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন দরকার।
পাশাপাশি একসময় নতুন রিকশা ও রিকশাচালকদের জন্য যে লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটা আবার চালু করা, যেন নতুন কেউ ঢাকায় এসেই রিকশা নিয়ে নেমে না পড়তে না পারেন। নতুন নতুন কর্মসংস্থান করে শ্রমজীবী মানুষকে এ পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
তারিক উজ জামান: গবেষক