ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম, যা–ই বলুন না কেন, এখনকার মানুষের জীবনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষের জীবন থেকে কায়িক শ্রম কমে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। মানুষ এখন আরামপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে ব্যাপক হারে।
ফলে কী হচ্ছে? মানুষ যে রোগগুলোতে আগে সহজে আক্রান্ত হতো না, বা আক্রান্ত হলেও শেষ বয়সে কেউ কেউ আক্রান্ত হতো, সেই রোগগুলোতে মানুষ এখন ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে, এমনকি খুব কম বয়সেও অনেক মানুষ রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হার্ট অ্যাটাক।
আপনি দেখবেন, অনেক মানুষ এই রোগগুলোর দুইটি বা তিনটিতেই একই সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ এই রোগগুলোতে আগে মানুষ এত ব্যাপক হারে আক্রান্ত হতো না।
আমরা অনেকে এই রোগগুলোতে এত ব্যাপক হারে আক্রান্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে এমন অনেক বিষয়কে এই রোগগুলোর জন্য দায়ী বলে মনে করি, যেগুলোর সঙ্গে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রচার করা হয়, খাদ্যে ভেজালও নাকি এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার একটা বড় কারণ। কিন্তু আপনি দেখবেন, যেসব দেশে খাদ্যে ভেজাল তেমন নেই বা একেবারে কম, সেসব দেশের মানুষও এই রোগগুলোতে ব্যাপক হারে আক্রান্ত হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সৌদি আরব, কাতার বা ওমানে খাদ্যে ভেজাল তেমন নেই বললেই চলে। আপনি দেখবেন, বাংলাদেশের যারা এই দেশগুলোতে থাকে, তারাও এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় ব্যাপক হারে। অনেকে এই রোগগুলো শরীরে বয়ে নিয়েই দেশে ফিরে আসে। এই সব দেশে বসবাসরত অসংখ্য মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করে। আমার পরিচিত অনেক মানুষ আরব দেশগুলোতে থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের কিছু আত্মীয়ও এই তালিকায় আছে।
তাহলে এটা কেন হয়? যদি খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো, তাহলে উন্নত দেশগুলোতেও মানুষ কেন এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়?
এই রোগগুলোর জন্য ধূমপানকেও দায়ী করা হয়। কিন্তু ধূমপান সত্যিই এই রোগগুলোর জন্য দায়ী কিনা, তা আমরা কখনো তলিয়ে দেখিনি। আমরা একটু চোখ বুলিয়ে দেখলেই নিশ্চিত হতে পারব, শুধু ধূমপান এই রোগগুলোর জন্য মোটেই দায়ী নয়। ধূমপান করেন না বা ধূমপানের ধারেকাছেও যান না, এমন অনেক মানুষ এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়া এবং কয়েক দশক ধরে ধূমপান করা সত্ত্বেও অসংখ্য মানুষের এই রোগগুলো থেকে বেঁচে যাওয়া প্রমাণ করে, শুধু ধূমপান এই রোগগুলোর জন্য দায়ী নয়।
মূলত মানুষের জীবনে যখন প্রচুর কায়িক শ্রম ছিল, তখন মানুষ এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো না সহজে। কায়িক শ্রমের কারণে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারত না বলে এই রোগগুলো মানুষকে আক্রমণের সুযোগ পেত না।
মানুষ যখন থেকে কায়িক শ্রম থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে, তখন থেকেই এই রোগগুলো মানুষকে ব্যাপক হারে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে সরে গেলে, আরামে আরামে জীবন কাটালে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। কোলেস্টেরল বেড়ে গেলেই এই রোগগুলো একটির পর একটি মানুষকে আক্রমণ করতে শুরু করে।
আপনার বয়স যদি পঞ্চাশ বছরের বেশি হয়ে থাকে, আপনি আমার এই কথার সঙ্গে একমত হতে দুইবারও ভাববেন না। কারণ, এই বাস্তবতার সাক্ষী আপনি নিজে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই কথা বুঝতে অনেক কষ্ট হবে। কারণ, তারা জীবনের পদে পদে কায়িক শ্রম কাকে বলে, দেখেনি।
জীবনের পদে পদে কায়িক শ্রম যখন ছিল, তখন মানুষ বয়স অনেক বেশি হয়ে গেলেও সুস্থ থাকত, কিন্তু এখন অসংখ্য মানুষের জীবনে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দশ মিনিটও কায়িক শ্রম নেই। তাই মানুষ অল্প বয়সে এবং ব্যাপক হারে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছে।
আমার যখন এই উপলব্ধি হয়েছে, তখন থেকেই আমি নিয়মিত কায়িক শ্রম করছি। তাই এই রোগগুলোর কোনোটিতেই এখনো আক্রান্ত হইনি।
আপনি দেখবেন, এখনো সামজে কিছু মানুষ আছে, যাদের জীবনটা কায়িক শ্রম করে করেই কাটে। এই রকম মানুষগুলোকে দেখবেন এই রোগগুলো থেকে একেবারে নিরাপদ।
তাই এই রোগগুলো থেকে বাঁচতে হলে কায়িক শ্রম বা ব্যায়ামের বিকল্প নেই।
কায়িক শ্রম কত সময় করবেন? আপনি যদি অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম হয়, এমন কোনো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করেন, তাহলে দৈনিক দশ থেকে বিশ মিনিট করাই যথেষ্ট। কিন্তু যদি মধ্যম মানের শারীরিক পরিশ্রম হয়, এমন কোনো কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করেন, তাহলে চল্লিশ মিনিটের মতো করা উচিত।
এখানে মূল কথা হচ্ছে, দৈনিক একবার শরীর থেকে ভালোভাবে ঘাম ঝরানো। আপনি যে ব্যায়ামই করেন, আপনার শরীর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার ভালোভাবে ঘাম ঝরাতে পারলেই হলো। আপনাকে ওই দিন আর কোনো কায়িক শ্রম না করলেও কোনো সমস্যা নেই। নিয়মিত কায়িক শ্রম করুন। সুস্থ থাকুন।
নূর আহমদ
শিক্ষক, রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বশিকপুর, সদর, লক্ষ্মীপুর