বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, কেউ এক টুকরা মাংস বাসায় দিয়ে যায়নি

ঈদ মনকে দেয় আনন্দ। বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা-প্রীতি। আত্মীয়দের প্রতি তৈরি করে সহানুভূতি। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। তবে এই ঈদ সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনে না, বিশেষ করে কোরবানির ঈদে।

আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা খুবই আক্ষেপের সঙ্গে ঈদের দিন পার করে। এমনই এক নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে জামিল। সবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে গেছে, তবে আর দশজনের মতো নতুন কাপড় পরে ঈদে যাওয়ার সামর্থ্য নেই জামিলের। কারণ, তার বাবা বেঁচে নেই, তাই এক দিন চুলায় আগুন জ্বললে তো আরেক দিন বন্ধ থাকে। এ কারণে ঈদে নতুন জামাকাপড় পরা যেন তার স্বপ্নের মধ্যেই রয়ে যায়।

পুরোনো কাপড় পরেই জামিল চলে যায় ঈদের নামাজ পড়তে। খানিকক্ষণ পরে বিষণ্ন চেহারা নিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে আসে। ঘরে এসে কিছু না বলেই শুয়ে পড়ে বিছানায়। জামিলের মায়ের আর বুঝতে বাকি নেই, কোরবানি না দিতে পারায় ছেলের খুবই খারাপ লাগছে।

বেলা ১১টা বাজে। জামিল বাইরে গিয়ে দেখছে, মানুষ গরু কাটাকাটি নিয়ে খুবই ব্যস্ত। সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, জামিলের অজান্তেই চোখের কোণে পানি জমে গেছে।

সে হয়তো ভাবছে, সবাই কত আনন্দ করছে, গরু কাটাকাটি করছে, আমি কেন পারছি না। আমার বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে আমিও তাদের মতো গরু কাটাকাটি করতাম, ঈদের দিন আনন্দ করতাম। কেন আমার আব্বা বেঁচে নেই। এগুলো ভেবে হয়তো জামিল অনবরত কান্নাকাটি করছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সবাই যখন মাংস কাটাকাটি করে খাওয়াদাওয়া নিয়ে ব্যস্ত, তখনো কেউ জামিলের কথা মনে করে এক টুকরা মাংস বাসায় দিয়ে যায়নি। আমাদের দেশে এমন হাজারো জামিল রয়েছে, যাদের ঈদের দিন মাংস খাওয়া হয় না। কারণ, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য তাদের থাকে না।

এ বছর কোরবানি দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির কাছে সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) ভরি থাকতে হবে। টাকাপয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে হিসাব হলো: এর মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে। সোনা বা রুপা কিংবা টাকাপয়সা—এগুলোর কোনো একটি যদি আলাদাভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) দর অনুযায়ী, সাড়ে ৫২ তোলা ২২ ক্যারেট রুপার দাম হলো ১ লাখ ১০ হাজার ১৮৭ টাকা। সাড়ে ৫২ তোলা ২১ ক্যারেট রুপার দাম ১ লাখ ৫ হাজার ২৯০ টাকা। আর ১৮ ক্যারেট রুপা সাড়ে ৫২ তোলার দাম পড়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। সনাতন পদ্ধতির রুপা সাড়ে ৫২ ভরির দাম ৬৭ হাজার ৩৩৭ টাকা।

কিন্তু আমাদের দেশে জামিলদের মতো অনেক মানুষ আছে, যাদের কাছে এই পরিমাণ টাকা থাকে না। ফলে তাদের কোরবানি দিয়ে আর মাংস খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য আছে, তারা যেন ঈদের দিন জামিলদের কথা চিন্তা করে। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে।

সাকিবুল হাছান

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

sakibulhasanlearning@gmail.com