বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনলে সুন্দর একটি ক্যাম্পাসের দৃশ্য আমাদের চোখে ভাসে, কিন্তু এর ভেতরেই বসবাস ভয়ংকর কিছু মানুষের। যাঁদের ক্ষমতা স্বয়ং উপাচার্য থেকেও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে, আপনাকে এই ভয়ংকর মানুষগুলোকে মেনে নিতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য এসে আপনাকে ভোগ করতে হবে তাঁদের নিষ্ঠুর আচরণ। এর শিকার হতে হয় অসংখ্য নিরীহ শিক্ষার্থীকে।
বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ দিলেও আপনি সেই সিটে উঠতে পারবেন না। কারণ, সেখানে সেই ভয়ংকর মানুষদের রাজত্ব কয়েম হয়েছে। তাঁরা তাঁদের ইচ্ছেমতো সিট দেবেন। মানে, সিট বিক্রি করবেন। বিক্রি করলে ৫–১০ হাজারের অধিক টাকা পাবেন। আর সেই টাকা দিয়ে তাঁদের ফুর্তিময় জীবন কাটাবে। দামী ফোন ও গ্যাজেট কিনবেন।
কোনো শিক্ষার্থী যদি তাঁর বরাদ্দ করা সিটে ওঠেন, তাঁর থেকে টাকা না পেলে তাঁকে আর হলে থাকতে দেন না ভয়ংকর মানুষগুলো। তাঁকে হল থেকে নেমে যেতে হবে। না নামলে কোনো এক মধ্যরাতে মারধর করে বিছানাপত্র ফেলে দেওয়া হবে।
পরদিন সংবাদমাধ্যমে খবর হবে, পত্রিকায় ছবি ছাপানো হবে। সে খবর ও ছবি ফেসবুকে শেয়ার হবে। পরিবারও দেখতে পাবে, তাদের ছেলের উচ্চশিক্ষার নির্মম পরিহাস। দেখতে পাবে, তাদের ছেলের হাসিমাখা মুখটা উচ্চশিক্ষার ঢামাঢোলে ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।
বলছিলাম দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা দানবীয় কাহিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ভয়ংকর ব্যক্তিদের আদর-সোহাগ দিয়ে লালন–পালন করে। কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে সেসব ব্যক্তির জন্য নেমপ্লেটসহ আসন বরাদ্দ থাকে। তাঁদের পুষে বড় করাই যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কারণ, তাদের নিরাপত্তার বিধান রহিত আছে এই ভয়ংকর মানুষগুলোর হাতে।
বিশেষ করে ছেলেদের আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত থাকেন তাঁরা। তা না হলে স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের দিন খাবার ছিনতাই, একের পর এক শিক্ষার্থী নির্যাতন করেও এসব ব্যক্তি কীভাবে বুক ফুলিয়ে চলতে পারেন।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এসব নেতা–কর্মীকে কি থামানোর কেউ নেই?
মেহেদী হাসান মুন্না
সভাপতি, নাগরিক ছাত্র ঐক্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়