চিঠিপত্র

ছিন্নমূল শিশুদের মাদকাসক্তির দায় কার

পথশিশুদের ভাষ্যমতে, ড্যান্ডি গ্রহণের অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্ষুধা। ড্যান্ডিতে ঝিমুনি আসে, ঘুম আসে। তখন ক্ষুধার কথা মনে থাকে না।
ফাইল ছবি

শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদকসেবনের ঘটনা বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে, শিশুমনের কৌতূহল, দারিদ্র্য এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

বাংলাদেশে মাদকের অপব্যবহার একটি সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুর শারীরিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলে। এটি পরিবার, সম্প্রদায়ের নেতা, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, সরকার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে। পথশিশুরা ক্ষুধার জ্বালা, একাকিত্বের কষ্ট বা সঙ্গদোষে নানা ধরনের মাদক নিচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম মাদক ড্যান্ডি। পথশিশুদের ভাষ্যমতে, ড্যান্ডি গ্রহণের অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্ষুধা। ড্যান্ডিতে ঝিমুনি আসে, ঘুম আসে। তখন ক্ষুধার কথা মনে থাকে না।

এখন আলোচনার বিষয় হচ্ছে, বিশালসংখ্যক ছিন্নমূল শিশু মাদকাসক্তের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত, বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি, অল্প বয়সে মাদক গ্রহণের ফলে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারের মতো অসুখ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি। নেশার কারণে ছিন্নমূল শিশুদের মানসিক বিকৃত ঘটে। এ কারণে নেশার অর্থ জোগাড় করা ছাড়াও নৈতিক স্খলনের কারণে খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, চুরি, পকেটমারি, মাদক কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, বিশালসংখ্যক পথশিশুর মেধা ও প্রতিভাকে সমাজের কোনো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ছিন্নমূল শিশুদের মাধ্যমে এ দুই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন এবং সমাজের মূল স্রোতোধারায় ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্র।
পথশিশুদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে আইনের প্রয়োগ খুব বেশি কাজে আসবে না। শিক্ষা, সহমর্মিতা, ক্ষুধা ও বাসস্থানের বন্দোবস্তের পাশাপাশি পারিবারিক আবহ পেলে ছিন্নমূল শিশুরা কখনো বিপথে যাবে না।

  • আসাদুজ্জামান বুলবুল
    শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়