চিঠিপত্র

শিশুদের ভবিষ্যৎ তাদের ইচ্ছাতেই হোক

শিশুরাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কর্ণধার। মা–বাবার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। তাদের ঘিরে সব পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন। একটি শিশু পৃথিবীতে আসার সুখবর শোনামাত্র এক দম্পতি নিজেদের মা–বাবা ভাবতে শুরু করেন। তাঁদের অনাগত শিশুর জন্য কী করবেন, কীভাবে তার বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করবেন—এসব নিয়ে অস্থির হয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন। শিশু জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মা–বাবা পরিকল্পনা করেন বড় হয়ে তাকে কোন পেশায় দেখতে চান তাঁরা।

বেশির ভাগ মা–বাবাকে বলতে শোনা যায়, আমার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। শিশুদেরও ঠিক সেভাবে শেখানো হয়, যাতে কেউ জিজ্ঞেস করলে না বুঝে বলে ফেলে—আমি বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হব। অথচ সেই বয়সে শিশুদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কেমন পেশা তা বোঝার মতো ক্ষমতা তৈরি হয় না। স্কুল-কলেজে মা–বাবা ও শিক্ষক ঠিক করে দেয় সে বিজ্ঞান, মানবিক নাকি বাণিজ্য বিভাগে পড়বে। বাধ্যগত সন্তানের মতো সে তা–ই গ্রহণ করে নেয়। আবার উচ্চমাধ্যমিক শেষ হতে না হতেই শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিংয়ে ভর্তির পালা। মা–বাবা তাদের ভর্তি করিয়ে দেন পছন্দসই কোচিংয়ে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মা–বাবাকে দেখা যায়, তাঁরা যে পেশায় কর্মরত, সেই পেশার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর সন্তানদের দেখতে চান। শিশু যদি অন্য কোনো পেশায় যেতে আগ্রহী হয়, অনেক ক্ষেত্রে সেটা প্রকাশ করার সুযোগ পায় না।

অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। কেউ হতে চায় ক্রিকেটার, কেউ বা উকিল, জজ-ব্যারিস্টার, কেউ শিক্ষক, কেউ শিল্পী বা ব্যাবসায়ী। কিন্তু পরিবারের চাপে দমিয়ে রাখতে হয় সেই ইচ্ছা। যার ফলে দেখা যায় তারা একরকম বাধ্য হয়ে পড়ালেখা করে। খুশি মনে কোনো পেশা গ্রহণ করতে পারে না।

একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখুন, আপনার শিশু কোন বিষয়ে পারদর্শী। কোন কাজ সে আগ্রহ নিয়ে করছে। কোন কাজ করে সে আনন্দ পাচ্ছে। তাকে সে কাজে উৎসাহিত করুন এবং তার প্রশংসা করুন। দেখবেন সে আরও দ্রুত তার নির্ধারিত পথে এগিয়ে যাবে। সাফল্য অর্জনের পথ আরও সহজ হবে।

বেড়ে উঠুক শিশুরা কোনো পারিবারিক চাপ ছাড়া। বেছে নিক তাদের পছন্দের কাজকে পেশা হিসেবে। তাহলে আর কাউকে বাধ্য হয়ে, অনাগ্রহ নিয়ে কাজ করতে হবে না তার ভবিষ্যৎ গড়তে। আসুন আমরা সব শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি। তাদের মতামত জানতে চাই। তাদের বেড়ে উঠতে দিই নিজ পারদর্শিতায়। এতে তারা অনেক বেশি স্বাবলম্বী হবে, সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে তার ভবিষ্যৎ কোনো বাধাবিপত্তি বা অনাগ্রহ ছাড়া। শিশুদের ভবিষ্যৎ তাদের খুশি মনে নিজ ইচ্ছায় হোক। শুভকামনা সব বাড়ন্ত শিশু-কিশোর এবং নিরলস, সুবিবেচক মা–বাবার জন্য।

সাফি ইরফাত জেবিন
মেডিকেলের পূর্ব গেট, সদর, রংপুর।
shafiearfatjebin@gmail.com