চিঠিপত্র

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। দেহের  বৃদ্ধি গঠন  ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে খাদ্য অপরিহার্য। তবে একবিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও দেহকে কর্মক্ষম রাখার জন্য  নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই সকলের উচিত খাদ্যতালিকায়  আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি এই সবগুলো উপাদান  নিশ্চিত করা। যাকে বলা হয় সুষম খাবার। তাই শুধু পেট ভরার জন্য খাওয়া এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই সকলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে বোঝায় খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করেছে। এগুলো হলো, খাদ্যের পর্যাপ্ততা, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং খাদ্যের ব্যবহার-অপব্যবহার। চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের সরবরাহ থাকাকে বলা হয় খাদ্যের সহজলভ্যতা। খাদ্য ক্রয় করার সামর্থ্য থাকাকে বলা হয় খাদ্য গ্রহণের সামর্থ্য। তবে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে হবে না তার পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ খাদ্য। খাদ্যকে ভেজাল ও অন্যান্য দূষণ থেকে মুক্ত অবস্থায় গ্রহণ করায় হলো নিরাপদ খাদ্য। নিরাপদ খাদ্য ব্যতীত খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুললে তা আরও বিপদ হবে। কেননা অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে থাকে। আমরা প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই বিষক্রিয়ায় মৃত্যু যা মূলত অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের জন্য হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে অসুস্থ হয় এবং এর থেকে মারা যায় প্রায় ৪ লাখ ৪২হাজার মানুষ। এ ছাড়া ৫ বছরের নিচে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশ শিশু অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে অসুস্থ হয় যার থেকে প্রতি বছর ১লাখ ২৫ হাজার শিশু মারা যায়।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেখানে সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে সেখানে নিরাপদ খাদ্য অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯ বিলিয়ন হবে এবং খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে ৮৫%। এর মধ্যেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির প্রভাব তার সাথে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক খাদ্য সংকটের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এখনও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বলা যেতে পারে আকাশচুম্বী যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বল্প আয়ের মানুষ তিন বেলার খাবার জোগাড় করতে পারছে না। কিছু উন্নত দেশ খাদ্য নিরাপত্তা অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে পারলে ও খাদ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বে এখনও প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ খাদ্যের অভাবে ভুগছে।

খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার গ্রহণ পর্যন্ত খাদ্য যেকোনো ভাবে অনিরাপদ হতে পারে। কেননা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সাথে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে গিয়ে উৎপাদন করতে হচ্ছে ঠিকই। যার সুফল ভোগ করছে এক শ্রেণির মানুষ যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত। তারা লাভবান হওয়ার জন্য একই জমিতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে চাষ করছে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে খাদ্যকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখছে এবং অসময়ে বিভিন্ন অসাধু উপায়ে বিভিন্ন জিনিসের চাষ করে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে। ফলে ভোক্তার  অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। ক্যানসারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগের সৃষ্টি হচ্ছে শরীরে। এই রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ছুটছে আবার হাসপাতালে। যেখানে খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তারা জোগাড় করতে পারছে না সেখানে আবার চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাই নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। নিজেরা চেষ্টা করলেই আমরা খুব সহজেই নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে পারি। আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া ফল ও সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই আমাদের বাড়ির আঙিনায় যতটুকু খালি ও পতিত জায়গা রয়েছে এবং শহরের বাসা বাড়ির ছাদে যথাযথ ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা করে খুব সহজেই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস আবাদ করে সতেজ খাবার আমরা গ্রহণ করতে পারি তার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি ।

হৃদি সরকার
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়