শেষমেশ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। ৩৩তম থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের সত্যতা ওঠে এসেছে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াল দেশের অবস্থা!
এ দেশের মানুষের সরকারি চাকরির জন্য সবশেষ ভরসায় জায়গা ছিল বিসিএস। কিন্তু শেষমেশ এটিও কলুষিত হয়ে গেল। সব খাতে দূষিত হয়ে গেলেও অন্তত বিসিএসের জায়গাটি এখনও দূষিত হয়নি—এমন বিশ্বাস আমারসহ এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে ছিল। কিন্তু সে বিশ্বাসও শেষ পর্যন্ত ধোঁকা দিল আমাদের। মেরুদণ্ড বজায় রাখতে পারেনি বিসিএসের প্রতিষ্ঠান পিএসসি।
চারপাশের অবস্থা এবং এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে বিসিএস নিয়ে মোহ দেখে আমার পরিবারও আমাকে বিসিএস দিয়ে রাষ্ট্রীয় আমলা-কেরানি হতে বিভিন্ন সময়ে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। তাদের এমন মনোভাব গড়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে এ দেশে আমলা বা কেরানিতন্ত্রের দিগ্বিজয়ী ক্ষমতা।
কিন্তু আমরা এখন কী দেখতে পাচ্ছি। আমলা-কেরানি হয়ে কীভাবে একেক বেনজীর কিংবা মতিউর হওয়া যায়, কীভাবে আমলা বা কেরানিতন্ত্রের ক্ষমতা প্রয়োগ করে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করা যায়, কীভাবে রাষ্ট্রকে লুটপাট করে খাওয়া যায় সেসবই এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠেছে। কিন্তু আমার আমলা-কেরানি হওয়ার ইচ্ছা কোনোকালেই ছিল না, এখনও নেই।
কেননা এই আমলা বা কেরানিতন্ত্রের অন্দরমহলের খবর আমি অনেকটা জানি। তাছাড়া আমি যে জীবনযাপন করি বা করতে অভ্যস্ত এখানে সৎ থেকে সে জীবনযাপনের সুযোগ নেই। সৎ থেকে এখানকার বেতনকাঠামো আমার পোষাবে না, তাই আমি হিসাবনিকাশ করে এ আমলা বা কেরানিগিরিতে না আসায় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। জীবনে আমি যাই হই, অন্তত অসৎ হতে পারব না, অসৎভাবে জীবনযাপন করতে পারব না।
আর আমি আমার যোগ্যতার চেয়ে কম মূল্যে কোথাও কাজ করতে পারব না। তার মানে এ বলছি না যে, যারা সরকারি চাকরি করেন তাঁরা সবাই অসৎ।
সোনার হরিণ বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় একটি প্রশ্নের উদয় হলো যে—‘যোগ্যতার মাপকাঠি কী?’ সবদিকে নৈরাজ্য চললে এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যাবে কোথায়? এমন পরিস্থিতিতে কবি দাউদ হায়দারের কণ্ঠে তাল মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠে বাজছে—‘এ বঙ্গমুল্লুকে জন্মই আমার আজন্ম পাপ!’
এ দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন নিয়ে যারা খেলা করছেন তাঁরা কীভাবে এর দায় এড়াবেন? যদিও এ দেশের এখন আর কোনো কিছুতে কারও কোনো দায় নেই। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে হয়: ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।’
ইমরান ইমন সংবাদকর্মী
ইমেইল: emoncolumnist@gmail.com