বিদেশের মাটিতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে অধ্যয়ন ও অর্থ উপার্জন করে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর প্রবাসীরা তাঁদের কষ্টের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। কিন্তু সেই প্রবাসীদের মধ্যে কোনো ভাই অথবা বোন যখন বিদেশের মাটিতে মারা যান, তখন সেই লাশ বিদেশের কোনো না কোনো হাসপাতালের মর্গে অবহেলায় দিনের পর দিন ও মাসের পর মাস পড়ে থাকে। যেন বিদেশে মরেও শান্তি নেই প্রবাসীদের! মারা যাওয়ার পর প্রবাসীর লাশ হয়ে ওঠে ভোগান্তির অপর নাম আর পরিবারের কাছে উৎকণ্ঠা আর আহাজারি।
বিদেশের মাটিতে একজন প্রবাসীর লাশ দেশে ফেরত আনতে ফ্লাইট খরচের টাকা জোগাড়, নিজের দেশ ও দূতাবাসের কাগজপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া এবং এক গাদা নিয়মকানুন শেষ করে লাশ দেশে আসতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। নিজ দেশের পরিবার–পরিজনের কাছে ততক্ষণে ওই মৃত্যু সংবাদ হয়তো অনুভূতিশূন্য একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো প্রবাসীদের মৃত্যু সংবাদ সাত–আট দিন এমনকি মাসখানেক পর এসে পৌঁছায় দেশের আত্মীয়স্বজনের কাছে। আবার কখনো কখনো বিদেশের মাটিতে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়ে যায় হতভাগ্য প্রবাসীর লাশ।
বিভিন্ন দেশে থাকা আমাদের প্রবাসীদের অভিযোগ, জীবিত অবস্থায় কোনো সরকারি সহযোগিতা পান তো না, বরং বিদেশের মাটিতে মৃত্যু হলে সেই লাশটিকেও পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে ও ভোগান্তিতে। প্রবাসীদের চাঁদার টাকা ও দেশে থেকে স্বজনদের পাঠানো টাকা না হলে সেসব লাশের ভাগ্যে দেশের মাটি জোটে না। অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে স্থানীয় বিদেশিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দেশে পাঠানোর বিমান খরচ বহন করা হয়।
সম্প্রতি চীনে একজন ছাত্র মারা গেলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি; তাই প্রবাসীরা অর্থ সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি প্রবাসীদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর লাশ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে দূতাবাসের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও তারা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশে দূতাবাস খুলে প্রবাসীদের সহায়তার জন্যই আর তারা কী করছে?
সৈয়দ আশিকুজ্জামান আশিক
আনকিং, চীন