চিঠিপত্র

জলবায়ু পরিবর্তনরোধে চাই বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো দুর্যোগকবলিত দেশের জন্য অনেক বড় হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উদ্বেগজনক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির অধিক ব্যবহার এর জন্য প্রধানত দায়ী। শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব গ্যাস আমাদের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮–এর মূল বিষয় ছিলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো। সম্মেলনে সব রাষ্ট্র জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে একমত হয়েছে। বাংলাদেশে এর গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। ক্লাইমেট ভালনারেবল ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের ১৯২টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশে জ্বালানি শক্তির সিংহভাগ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এখানে মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যায়।

কয়লা, তেল, গ্যাসসহ অধিক কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানির ব্যবহার কমাতে না পারলে বাংলাদেশের ওপর ভবিষ্যতে অনেক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বেশি হতে পারে। উপকূলীয় জেলাগুলোয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে সুপেয় পানির সংকট দেখা দেবে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি খাত। ভেঙে পড়বে অর্থনীতি।

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চল স্থায়ীভাবে তলিয়ে যেতে পারে। এ বছর বাংলাদেশ চারটি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলবে। সমুদ্রে গ্যাস বৃদ্ধি পেয়ে মৎস্যসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পতিত হবে।

এসব সমূহ সমস্যা রোধ করতে আমাদের এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে ভাবতে হবে। দেশের পায়রা ও রামপালের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কয়লানির্ভর, যা দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমাদের এগুলোর বিকল্প ভাবতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। যানবাহনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। দেশের সর্বত্র গৃহস্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।

দেশের সব প্রকল্পে জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সৌর ও বায়ুচালিত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অধিক হারে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বৃক্ষ নিধন পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি এখন সব বিষয়ে বাংলাদেশের কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

ইকবাল হোসেন ইমন
শিক্ষার্থী, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।