বত্রিশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, অবহেলার জাঁতাকলে আর কত কাল

একত্রিশ পেরিয়ে বত্রিশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা স্তরের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের তদারক করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি চাপ পোহাতে হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। সেই চাপ কমাতে ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা মূলত এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষায় রয়েছে  স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) ও স্নাতকোত্তর কোর্স।

দেশের উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে নানামুখী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবহেলার জাঁতাকলে। যেখানে দেশের বেশির ভাগই অর্থাৎ প্রায় ৩ ভাগের ২ ভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। অথচ সেখানেই যত সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা, সবকিছুই যেন এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আবর্তিত।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেশনজট। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেশনজট সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই সেশনজটের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবনে আজ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি, কারিগরি শিক্ষায় অনগ্রসরতা এবং ক্লাস ও অবকাঠামোগত সমস্যা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই তামাশা যেন কোনোভাবেই থামছে না।

শুধু তা–ই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যবর্তী বিস্তর ফারাক। এই প্রতিবন্ধকতার দেয়াল পেরোতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। এমনকি এই প্রতিবন্ধকতার সমাধান খুঁজে না পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও এমন প্রতিবন্ধকতার অভিশপ্ত দেয়ালে আটকে আছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রতিবন্ধকতা থেকে শিক্ষার্থীরা আদৌ মুক্তি পাবেন কি?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ–সংক্রান্ত জটিলতা। এককথায় যাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনিয়ম বা চূড়ান্ত গাফিলতিও বলা চলে। দেখা যায়, একজন পরীক্ষার্থী আটটি কোর্সের ছয়টি কোর্সে আশানুরূপের চেয়েও বেশি মার্কস পেয়ে যাচ্ছেন, আর বাকি দুটি কোর্সে হয়তো সি গ্রেড নয়তো সি প্লাস গ্রেড পাচ্ছেন। কিংবা এমনও হয়ে থাকে, বাকি দুটি কোর্সেই এফ গ্রেড আসছে। এখন এই অকৃতকার্য কোর্স দুটির উত্তরপত্র অনলাইনে পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন করে কখনোই সঠিক প্রতিকার মেলেনি।

কিন্তু একজন পরীক্ষার্থী তাঁর অকৃতকার্য কোর্সসমূহ সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে পারছেন না। কারণ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় একমাত্র ঢাকার গাজীপুরে; যেখানে যাতায়াত বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বাইরের অন্যান্য জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ে এসে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ করা কয়জনের ভাগ্যে আর জোটে?

সর্বোপরি  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপার সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন প্রাণ ফিরে পাবে।
অতঃপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও সুবিবেচনা কামনা করছি।

এস এম রাহমান
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম কলেজ
কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম