চিঠিপত্র

খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

‘গরিব, অসহায় ও জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর শিশুসহ এতিম তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে পড়ালেখা করে।’
‘গরিব, অসহায় ও জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর শিশুসহ এতিম তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে পড়ালেখা করে।’

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবের ক্ষত এখনো শুকায়নি পর্যটনের নগরী কক্সবাজারে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল কুতুব একাডেমিতে চলছে খোলা আকাশের নিচে ‍শিশুদের পাঠদান। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি মেরামতে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা কিংবা জনপ্রতিনিধি এখনো এগিয়ে আসেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের নীতি অনুসরণ করে শিক্ষার কাঠামো আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে নিয়মিত চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দারুল কুতুব একাডেমি শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি তাদের জীবন ও জীবিকা-সম্পর্কিত পাঠ শেখানো হয় প্রতিনিয়ত। গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পুনর্নির্মাণে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে।

গরিব, অসহায় ও জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর শিশুসহ এতিম তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে পড়ালেখা করে। নভেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে না পারলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন সিকদার জানান, ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি ইআইআইএনে অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ না হলে আগামী নভেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, জনপ্রতিনিধি এবং বিত্তশালীদের বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাওন বলে, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে আমরা কষ্ট করে পড়ালেখা করছি। ছাউনি না থাকায় বিদ্যালয়ের ভেতরে বসে ক্লাস করতে পারছি না। খোলা আকাশের নিচে বিদ্যালয়ের উঠানে ক্লাস করছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমাদের।’

জাহাঙ্গীর আলম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘দুই দশকের প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বিদ্যালয়ের ছাত্র পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছেন। অনেকে আইনজীবীও হয়েছেন। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড়ে বিলীন হওয়ায় পুনর্নির্মাণে কেউ এগিয়ে না আসা সত্যি দুঃখজনক। এ জন্য খোলা আকাশের নিচেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে শিক্ষকদের।’

এমতাবস্থায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আলী ওসমান শেফায়েত
শিক্ষক
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার