ভবদহের জলাবদ্ধতা

যশোর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর, ডুমুরিয়া ও ফুলতলার কিছু অংশ নিয়ে ভবদহের অবস্থান। চার দশক ধরে এখানকার ৩৩০ কিলোমিটার এলাকার ৩ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। গত দুই বছর কিছুটা কমলেও চলতি মৌসুমি ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার বিস্তৃতি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর অঞ্চলের ৩৫টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার কৃষকের ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

এ ছাড়া কয়েক হাজার মাছের ঘের বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার দীর্ঘ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে সবুজায়ন নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৬১ সালে পাঁচটি স্থানে ৪৪টি স্লুইসগেট স্থাপন করে। বর্তমানে ২১টি কপাটের মধ্যে ১৮টি পলি জমে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মুক্তেশ্বরী, শ্রীহরি ও টেকা নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। আগে ভবদহ বিল দিয়ে ২৭ বিলের পানি নদীতে গিয়ে নামত।

১৯৮১ সালের পর থেকে জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছে। জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা পলি স্লুইসগেটের মুখে জমা হয়ে নদীর গতিপথ সরু হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর দুই কূল ছাপিয়ে সমতল প্লাবিত হয়। চলতি মৌসুমে কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর, ডুমুরিয়া অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী এবং ৬০ ভাগ মানুষের বসতভিটায় পানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবদহ বিলের এ জলাবদ্ধতা সমাধানের জন্য টিআরএম স্থাপন, আমডাঙা খাল খনন, ২৭ বিল এলাকার অকাল জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত বিল খুকশিয়ার ওয়াপদার স্লুইসগেটের পলি অপসারণ জরুরি।

ষাটের দশকে ভবদহ থেকে বারোহাটি নদীটি ১৫০ থেকে ২০০ মিটার প্রস্থ ছিল; কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেটি এখন মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিটারে নেমে এসেছে, এর গভীরতা ৩ থেকে ৫ ফুট। বিগত সরকারের আমলে ডেলটা ২১ প্রকল্প হাতে নিলেও তার কোনো সুফল ভবদহে মেলেনি। এটির অন্যতম কারণ ছিল লালফিতার দৌরাত্ম্য ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। স্বাধীনতার পরে অনেকবার ভবদহ বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; কিন্তু সেটি ছিল অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ, যেখানে ছিল শুভংকরের ফাঁকি। কাজেই ভবদহ বিল এখন যশোরের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মো. তুহিন হোসেন

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ