শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে উঠুক

সারা দেশে পৌষের হাড়-কাঁপানো শীত নেমেছে। পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নেমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকাসহ সারা দেশে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতে উত্তরাঞ্চল, দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও গ্রামাঞ্চলে সাত-সকালে দেখা মিলবে অসংখ্য দুঃখী মানুষের। গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের শেষ নেই।

আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাঁদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তাঁর গায়ে গরম কাপড় জুটবে কীভাবে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?

শীত এলে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা শোনা যায় । সমাজের সামর্থ্যবান জনদরদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। তরুণ যুবকেরা মহল্লায় মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করেন এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন।

শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকাণ্ড। এবার সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে প্রথমে এগিয়ে আসার কথা রাষ্ট্রের। নানা সংস্থা, সংগঠনকেও শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়া চাইলে তাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে পারে। চাইলে গণমাধ্যম কর্মীগণ শীতার্তদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করতে পারেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের।

শীতার্ত মানুষদের তালিকা করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনকে কাজে লাগানো যায়। তালিকা ধরে প্রত্যেক শীতার্ত মানুষের কাছে শীতবস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য পাঠানোর কাজটি সরকার করতে পারে। তবে, শীতার্ত মানুষের এসব বস্ত্র, অর্থসহ সব সাহায্য যেন দুর্নীতিমুক্ত ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্গতদের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিতরণ ব্যবস্থা যেন ত্রুটিমুক্ত হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। অন্যান্য সংস্থাও তাদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।

অর্থাৎ সমন্বিত একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা করা যাবে। মানুষের অসহায়ত্বের এমন দৃশ্য মুছে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে ।

কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এ সকল দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। এর জন্য কি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া প্রয়োজন?

একটি পুরোনো কিংবা নতুন শীতবস্ত্র একজন শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের অবলম্বন হতে পারে।সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি এ সকল অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে বিন্দু বিন্দু সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।

এভাবে অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হবে মানবিক সেতুবন্ধন। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ।

মো. আনোয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।