চিঠিপত্র

আর নয় বাল্যবিবাহ

এই আধুনিক সময়ে এসেও বাল্যবিবাহের শিকার হতে হচ্ছে আমাদের মেয়েদের। দেশের শহরাঞ্চল-গুলোর থেকে গ্রাম-গঞ্জে উক্ত ঘটনা বেশি ঘটছে। আর এই ঘটনার জন্য ব্যাপক অর্থে দায়ী হলো শিক্ষার অভাব এবং দারিদ্র্য। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের মানুষেরা গ্রামের মানুষদের তুলনায় অনেকটাই শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে সচল হওয়ায় শহরাঞ্চলে বাল্যবিবাহ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আজও অন্ধকারে রয়ে গেছে এ দেশের গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য অঞ্চল। একদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয় অপরদিকে দারিদ্র্যের জন্য মা-বাবারা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভরণপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজছে।

ফলে পড়াশোনার প্রতি তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক মেয়ে শিকার হচ্ছে বাল্যবিবাহের। অবলীলায় ঝরে পড়ছে এ দেশের হাজারো সুপ্ত প্রতিভা। শুধু যে প্রতিভাগুলোই ঝরে যাচ্ছে এমনটা নয়। প্রতিভা ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে হুমকির মুখে পরছে তাদের জীবনও। অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহের ফলে অধিকাংশ মেয়েরা শারীরিক  ও মানসিকভাবে  দুর্বল হয়ে পরে। তা ছাড়া বাল্যবিবাহের ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের মতো ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটে চলেছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্য মা ও শিশু উভয়ই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এ ছাড়াও গর্ভধারণ, গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্য অনেক মা ও শিশুর জীবন পড়ছে ঝুঁকির মুখে। এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য মা ও শিশু মারা যাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়সে গর্ভধারণের জন্য।

এখন সময় এসেছে বাল্যবিবাহের মতো হীন মন-মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রথমেই আমাদের বাড়াতে হবে জনসচেতনতা এবং ঘটাতে হবে শিক্ষার প্রসার, আর কাজ করতে হবে দারিদ্র্য বিমোচনে। তাহলেই বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এ জন্যে আমাদের প্রত্যেককেই নিজেদের জায়গা থেকে সাধ্য মতো চেষ্টা করে যেতে হবে এবং সরকার ও প্রশাসনকেও আরও কঠোরভাবে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো অকালে ঝড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে হাজারো সম্ভাবনাময় জীবন।


মো. হাসিবুল হাসান
শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ