বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের একটি বড় অংশ অবহেলিত, নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত। বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ। এ দেশের অধিকাংশ পরিবার মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র। যার ফলে পরিবারগুলো ঠিকমতো জীবনযাপন করতে পারেন না। কারণ, তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে অক্ষম। তাই পরিবারগুলো শিশুদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে ক্ষুধা মেটাতে অনেক শিশু নেমে পড়ে রাস্তায়। এ ছাড়া বিভিন্ন পারিবারিক কলহের কারণে শিশুরা রাস্তায় নামতে পারে। অবিবাহিত নারী-পুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেওয়ায় সেই শিশুটিও পথশিশু হতে পারে। বিবাহবিচ্ছেদ ও পিতা-মাতার অকালমৃত্যু পথশিশু তৈরি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এ রকম নানা কারণে পথশিশুর সৃষ্টি হয়ে থাকে।
পথশিশুরা একমুঠো ভাতের জন্য রাস্তায় নেমে পড়ে। কেউ কাজ করে, কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে, আবার কেউ কেউ খাবারের জন্য চুরি করে। সেই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি শিশুদের দ্বারা অসৎ কাজ করিয়ে নেয়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণকর। একদিকে যেমন শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে শিশুদের দ্বারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে। তাই এই শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেওয়া সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য। তাই সমাজের সচেতন মহল ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে।
প্রথমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের খাবারের চাহিদা পূরণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এলাকাভিত্তিক পথশিশুদের খুঁজে বের করে পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। সার্বক্ষণিক সরকারের প্রতিনিধিদের দ্বারা পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের সব ধরনের ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। অন্যদিকে পথশিশুর সৃষ্টি যাতে না হয়, সে জন্য পরিবার ও সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ।
পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে । যদি এখন থেকেই বাংলাদেশ শিশুদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে না পারে, তাহলে ধীরে ধীরে সমাজে বখাটেদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাদের দ্বারা তৈরি হবে অপরাধীও।
পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সুশীল সমাজ, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে পথশিশুরা বখাটে না হয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার হয়ে উঠবে। পথশিশুরা সবার প্রচেষ্টায় সুশিক্ষিত হলে দেশকে ভালো কিছু দেবে বলে আশা রাখা যায়।
নরোত্তম পাল
শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়