পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী
পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী

আবেদ আলীদের হঠাৎ কেন সামনে আনা হলো

কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবিটি কখন থেকে জোরালোভাবে সামনে এসেছে জানেন? যখন থেকে এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ল যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) দুর্নীতিমুক্তভাবে পরীক্ষা নেয়।

ব্যাপারটা এমন যে যেহেতু পরীক্ষায় অনিয়ম হয় না, সেহেতু কোটা বাতিল বা সংস্কারের ফলে বর্ধিত চাকরিগুলো আমরা পড়াশোনার মাধ্যমে হয়তো পেয়ে যাব। এর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় হয়তো দাবিটিকে ত্বরান্বিত করেছে কিন্তু শুরুটা ওখান থেকেই।

এটা শুধু পিএসসি নয়, অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়া কর্তৃপক্ষের (ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি, আইবিএর বা বিজনেস ফ্যাকাল্টির মাধ্যমে নেওয়া পরীক্ষাগুলো ইত্যাদি) ব্যাপারেও মোটামুটি একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ অনিয়ম (এসবের মধ্যে ছিল ডিভাইস পার্টি, ভাইভায় পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয় কমই ছিল) হলেও পড়াশোনা করলে বা লেগে থাকলে চাকরি পাওয়া যায়। আর এটা শুধু ধারণা নয়, এটা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য। আমরাও তাই দেখেছি; দেখে এসেছি। বিশেষ করে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির (৯-১৩ গ্রেড) চাকরিগুলোর ক্ষেত্রে।

আজকের এই দিনে পিএসসিকেন্দ্রিক প্রশ্নপত্র ফাঁস বা সামগ্রিক অনিয়মের ভবিতব্য বিচারের যে নেতিবাচক সম্ভাবনা এবং কোটাব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের যে পশ্চাৎমুখী চিন্তা আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয়েছে, তাতে অনেকেই হয়তো উত্তর খোঁজা শুরু করবেন নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নের।

সাধারণ ছাত্রদের, বিশেষ করে একদম প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসা অনেককেই শুধু এই বিশ্বাসের বলে লেগে থাকতে এবং সফল হতে দেখেছি। আমার নিজের চাকরিকেন্দ্রিক পড়াশোনাকালীন যদি কেউ চাকরিতে অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রসঙ্গ আনত, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতাম। কারণ, এগুলো তুড়ি মেরে না উড়িয়ে দিলে আপনি পড়াশোনায় কনফিডেন্স পাবেন না; লেগে থাকার শক্তি পাবেন না। এটা আপনাকে ক্ষতি করবে কোটাব্যবস্থার চেয়ে ঢের বেশি।

কিন্তু কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এই তুমুল দাবির দিনগুলোতে হঠাৎ করে যে খবরগুলো আসা শুরু করল বা নিয়ে আসা হলো, তাতে সাধারণ ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাওয়ার শব্দ পাই; পড়াশোনায় লেগে থাকার শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সংকেত পাই। আমি বলছি না যে আবেদ আলী, সাজেদুল বলতে কিছু নেই কিন্তু বলতে চাই, তাঁরা এখন এলেন কোত্থেকে!

আজকের এই দিনে পিএসসিকেন্দ্রিক প্রশ্নপত্র ফাঁস বা সামগ্রিক অনিয়মের ভবিতব্য বিচারের যে নেতিবাচক সম্ভাবনা এবং কোটাব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের যে পশ্চাৎমুখী চিন্তা আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয়েছে, তাতে অনেকেই হয়তো উত্তর খোঁজা শুরু করবেন নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নের।

‘তাহলে কি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সাধারণ ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ঘোলা পানিতে সহজে কোটাব্যবস্থা পুনরায় চালুর উদ্দেশ্যেই ছিল?’

আমি মনেপ্রাণে চাই, প্রশ্নটির উত্তর ‘না’ হোক। তবে আসলেই কি ‘না’ বা ‘হ্যাঁ’, তা সময়ই বলে দেবে।

  • মো. আলমগীর হোসাইন
    সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।