চিঠিপত্র

দুর্যোগের আঘাতে আঘাতে আমরা বিক্ষত, টেকসই বাঁধ কবে হবে

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। প্রতিনিয়ত বন্যাও ঘূর্ণিঝড়ের লড়াই করে বেড়ে ওঠা উপজেলার মানুষ আমরা। দুর্যোগের আঘাত সহ্য করতে করতে আমরা বিক্ষত। এক দুর্যোগের ক্ষত না শুকাতেই আরেকটা এসে আঘাত হানে। অন্যভাবে বলতে গেলে আমরা অবহেলিত বটে। এককথায় আমাদের বছরের পর বছর সংগ্রাম করতে হয়। বছরের কিছু সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে আর কিছু সময় এই দুর্যোগের রেশ কাটিয়ে উঠতে।

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। সামুদ্রিক এই জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলের অবহেলিত উপজেলা হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ। সিডর-আইলার আর্থসামাজিক ক্ষতি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই জনপদ। মাঝে আঘাত হেনেছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। আম্পানের রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আঘাত হানল রিমাল, রিমালের তাণ্ডবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয় এতে উপজেলার উপকূলীয় গ্রামগুলো প্লাবিত হয়।

রিমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়। জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ফুট বেড়ে গিয়েছিল।

এভাবে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলে বাধাহীনভাবে আঘাত হানতে থাকলে একসময় উপকূলের এই জনপদ ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বর্তমান যে জীর্ণ ও শীর্ণ বাঁধগুলো আছে, তা বহু বছরের আগের। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক বছর আগেই। অথচ বিগত এক যুগেও এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবিটি পূরণ হয়নি। সে দাবি হলো, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। আশার বাণী শুনেছে বহুবার। বিগত এক যুগে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ বহু মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হচ্ছে কিন্তু উপকূলের লাখ লাখ মানুষের মৌলিক অধিকার-সংশ্লিষ্ট এই দাবির কোনো সুরাহা হয়নি। কোনো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলেই কাদামাটি আর পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বাঁধ দেওয়া হয়। ভঙ্গুর বাঁধ ভেঙে যায় সাধারণ জোয়ারের তোড়েই। তাই টেকসই বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই।

এর আগে অনেকবারই বরাদ্দ হয়েছে এবং বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে, যা টেকসই হয়নি কখনো। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা দরকার। কারণ, এই পরিকল্পনা আমাদের বেড়িবাঁধের সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো সুবিধা দিতে পারে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে। একটি সুন্দর পরিকল্পনাই এই বৃহৎ প্রকল্পকে বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারে। উপকূল বাঁচাতে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই।

মামুন রাফী

সংবাদকর্মী
হাতিয়া, নোয়াখালী