রাজশাহী কলেজ: হোস্টেলে ছাত্রলীগ নেতাদের মাস্তানির শেষ কবে

দেশসেরা রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের ব্যাপারে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা-সমালোচনা হলেও এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কলেজ প্রশাসন কতিপয় ছাত্রনেতাদের সাময়িক বহিষ্কার করলেও তাঁদের পদচারণে হল ও ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেশ ভীতসন্ত্রস্ত।

ছাত্রাবাসে থাকা মানেই বাধ্যতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। হোক সে বড় ভাই কিংবা অন্য কেউ। খাবারের প্লেটে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করবে কিংবা কিছু সময় পরেই পরীক্ষা, ঠিক ওই সময়ে কর্মসূচির ঘণ্টা বেজে গিয়েছে অর্থাৎ সবকিছু রেখে যেন এখনই যুদ্ধে যেতে হবে।

যদি কেউ ভুলক্রমে কিংবা বিশেষ কাজের কারণে কর্মসূচিতে না যান, তবে তাঁর ওপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন এবং কিছু টাকা নেতাদের নাশতা খরচের জন্য দাবি করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বাড়ি থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা এনে নেতাদের দিতে বাধ্য করা হয়। এমন ঘটনা নতুন নয়।

ওই টাকা দিয়ে ব্লকের ছাদে কিংবা বিশেষ রুমে সারা রাত চলে মাদকের আড্ডা। প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রুম থেকে বের করে দিয়ে মাদক সেবন করেন নেতারা।

যেখানে দূরের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুযোগ দেওয়ার কথা, সেখানে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বড় ভাইদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা দিলেই চার বছরের জন্য হলে সিট পাচ্ছেন। সাধারণত দূরের শিক্ষার্থীরা হলের অফিসে গেলে অফিস সহায়ক বলেন সিট ফাঁকা নেই। কিন্তু ব্লকে গেলে বড় ভাইয়েরা বলেন সিট ফাঁকা আছে। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের টাকা দাও, আমরা সিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

অবশ্য সিটের বন্দোবস্ত হয় এক বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে, যা সম্পাদিত হয় হলের কতিপয় অফিস সহায়ক ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি। তাঁদের কিছুই বলার থাকে না।

কিছুদিন পরপর নেতারা খরচের টাকা চান আর টাকা না দিতে চাইলে বাধ্য হয়ে হল ছাড়তে হয়। এ ছাড়া হলের ডাইনিংয়ে প্রতিদিনের খাবার খরচ রাখছেন ১০০ টাকা।

এই যদি হয় দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজের হলের ব্যবস্থাপনা, তবে সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাঁদের পড়াশোনা চালিয়ে নেবেন? হলের ব্যবস্থাপনার যাবতীয় অনিয়মের প্রক্রিয়ায় কলেজ ছাত্রাবাস প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের খুব জোরালো ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বারবার আলোচনায় এলেও হলের এই অব্যবস্থাপনার কোনো স্থায়ী সমাধান মিলছে না।

তাই সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিশেষ অনুরোধ রইল, রাজশাহী কলেজ হোস্টেলসহ সারা বাংলাদেশের হোস্টেলের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত আবাসিক শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য হলের আবাসিক ব্যবস্থা ও পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী

রাজশাহী কলেজ