চিঠিপত্র

দেশে কর্মমুখী শিক্ষা কেন বেশি জরুরি

বর্তমানে আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারে যাচ্ছেন, কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মিলছে না চাকরি অথচ তাঁরা উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু কেন উচ্চশিক্ষিত হয়েও বেকার থাকতে হয়, তা প্রশ্ন থেকেই যায়!

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।

গত নভেম্বর মাসে দেশের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে পৌঁছায়। অর্থাৎ, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উচ্চ হলেও তা তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরি তৈরি করার মতো যথেষ্ট হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুলাইয়ে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমকি ৪৭ শতাংশ।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মূল টার্গেট একাডেমিক সনদ পাওয়া কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফল করা। কিন্তু বাস্তবমুখী পড়াশোনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। এ কারণে উচ্চশিক্ষিত হয়েও থাকতে হচ্ছে বেকার, মিলছে না চাকরি। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের বাস্তবমুখী শিক্ষা দরকার।

একসময় একটা কাজ করার জন্য অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হতো, কিন্তু বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। যেকোনো কাজ কম লোকসংখ্যা এবং স্বল্প সময়ে করা যাচ্ছে, এ কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, প্রতিবছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিক্ষার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিত মানুষের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।

একজন শিক্ষার্থী যখন কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন, তখন তিনি স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল হবেন। ফলে তিনি তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করে নিতে পারবেন। দক্ষ মানুষই পারে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু দক্ষতা না থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, অদক্ষ মানুষ সমস্যার সমাধান করতে পারে না বরং সমস্যা বাড়ায়। তাই দক্ষ মানুষ তৈরিতে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দরকার।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে আসবে। বর্তমানে যাঁরা বেকার, তাঁরা যদি কর্মমুখী শিক্ষা অর্জন করতে পারেন, তাহলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারবেন। তাই সরকারের উচিত কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বারোপ করা। যে ধরনের শিক্ষা যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, সে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হোক। দক্ষ মানুষ তৈরি করাই হয় আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান লক্ষ্য।

সাকিবুল হাছান

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ