গদখালী বাজারে ফুলের বাজার
গদখালী বাজারে ফুলের বাজার

চিঠিপত্র

ফুল রপ্তানি বদলাতে পারে দেশের অর্থনীতি

সৌন্দর্যে আর সৌরভে মন জুড়িয়ে নেয় যে জিনিসটা, তার নাম ফুল। ফুল ভালোবাসে না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। প্রকৃতিতে যা কিছু শুভ ও সুন্দর, তার মধ্যে ফুলকে অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন এই ফুল চাষই হয়ে ওঠে জীবন নির্বাহের প্রধান মাধ্যম, তখন অর্থনীতির চাকা তো ঘুরে যাবেই।

যশোরের ছোট্ট উপজেলা ঝিকরগাছা। এই উপজেলার একটি গ্রামের নাম গদখালী। যার অর্থনীতিজুড়ে এখন ফুলের সৌরভ। ফুল চাষকে কেন্দ্র করে এখানকার বেশির ভাগ মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০ বছর আগেও যাঁরা পরিবার নিয়ে একসঙ্গে দুই বেলা খেতে পারতেন না, তাঁরাই এখন ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় এই গদখালীর ফুল। গদখালীকে বলা হয়ে থাকে ফুলের রাজধানী।

১৯৮৩ সালে ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুল চাষের মধ্য দিয়ে আমাদের বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন শুরু হয়েছিল। বাড়ির উঠান কিংবা ছাদের কোনায় টবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই ফুল। কিন্তু এখন শৌখিন উৎপাদনের গণ্ডি পেরিয়ে ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।

অর্থনীতির বুকে কুঁড়ি হয়ে ফুটেছে এই ফুল চাষ। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস, টিউলিপ, রজনীগন্ধা, জারবেরাসহ অনেক ফুল চাষ হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। আমাদের দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭০ শতাংশই মেটায় গদখালীর এই ফুল দিয়ে। সারা দেশ তো এখনো পড়েই আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের হিসাবে, ২০২২ সালে ৩২ হাজার টনের বেশি ফুল ফুটেছে আমাদের দেশে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির তথ্য বলছে, আমাদের দেশে দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার রয়েছে। একসময় গাঁদা, গোলাপ চাষ হলেও এখন ১৫-১৬ ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে আমাদের দেশে।

রাজধানী ঢাকার বাজার ভরে আছে হরেক রকমের ফুলে। একসময় এই ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। আর এখন এই ফুল নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ফুল রপ্তানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে খুব বেশি টাকার ফুল রপ্তানি না হলেও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এসে আমরা দেখি, ফুল রপ্তানি হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকার মতো। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৬২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এভাবেই ফুল চাষে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সক্ষম হচ্ছে।

বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। একটি গবেষণায় বলছে, সারা বিশ্বে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ফুলের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার মতো সুযোগ আছে আমাদের দেশের। এই সুযোগ এখনই কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। আমাদের এই ফুল মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ভারত, ইতালি, চীন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও ফ্রান্সে রপ্তানি হচ্ছে। সুনাম কুড়াচ্ছে আমাদের দেশ। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে।

শুধু শীত কিংবা বসন্তকালই নয়, সারা বছর এখন ফুলের চাষ হয়। কিন্তু এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাহিদা কম থাকায় বিক্রির থেকে নষ্ট হয় বেশি। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত থাকে চাষিদের সুখের দিন। ফুল যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, পাশাপাশি বাইরেও রয়েছে ফুলের বিপুল চাহিদা। আমাদের অর্থনীতিকে আরও বিকশিত করতে ফুলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে হবে। পাশাপাশি ফুল যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সে জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ফুলচাষিদের। যাতে তাঁরা অনেক দিন ফুল সংরক্ষণ করতে পারেন। ফুল চাষকে যদি আরও সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবনের চালিকাশক্তি সচল হবে। বাড়বে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও।
   
আইরিন হাসান
শিক্ষার্থী
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া