ডেলিভারিম্যান নিয়ে ভেবেছেন কি কখনো

হয়তো সাইকেলের প্যাডেল বা মোটরসাইকেলে ডিজেল কিংবা তেল পুড়িয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নির্ধারিত পণ্য নিয়ে হাজির হতে পারলেই পরে পেটে জুটে দুমুঠো ভাত। তীব্র রোদ কিংবা ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো মহাবিপৎসংকেত কানে বাজলেও তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে নতুবা মিলবে না অল্প পয়সার বেতন।

হ্যাঁ, কথা বলছি ডেলিভারিম্যানদেরই। যাঁদের কিনা দিনরাত অন্যের হাসিখুশি মুখগুলো দেখার তরে নিজের যত আয়োজন। কতই না তাঁদের সংগ্রাম। এ–পথ থেকে ও–পথে ছুটে চলা, ছুটে চলা দূরদূরান্তের কত রাস্তা। পৌঁছাতে হবে গ্রাহকের অর্ডার করা পণ্যটি নিয়ে।

নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পার্সেল সংগ্রহের পর কাস্টমারের দেওয়া ঠিকানা খুঁজে বের করে সঠিক কাস্টমারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া। কাস্টমার সার্ভিসের মূল্য আগে পরিশোধ না করে থাকলে কাস্টমারের কাছ থেকে সার্ভিসের বিপরীতে পেমেন্ট বা মূল্য নেওয়া, পার্সেল বুঝিয়ে দেওয়ার পর কাস্টমারের স্বাক্ষর নেওয়া এবং কোম্পানিতে রিপোর্ট করা; কতই না কাজ তাঁদের।

যাঁরা কিনা দেশের আনাচকানাচে ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছেন খাবার, ওষুধ, বই, রান্নার কাঁচামাল সামগ্রীসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য লাখো জিনিস। যাঁদের বদৌলতেই কিনা ব্যস্ত নগরীর ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজট, দোকানের ভিড় বা রেস্টুরেন্টের অলস অপেক্ষমাণ সময়—কিছুই ভোগ করতে হচ্ছে না আমাদের।

অথচ আমরা? আমরা কতটুকুই না তাঁদের মূল্যায়ন করছি? লকডাউনের মতো কঠিন সময়ে অফিস, দোকান বন্ধ থাকলেও এ সময় কোম্পানি ও ভোক্তার মধ্যে একমাত্র সেতুবন্ধন হয়ে কাজ করেছে এ ডেলিভারিম্যানরা। তাঁদের ওপর নির্ভর করে সচল থাকে অর্থনীতির একটা বিরাট অংশ।

ডেলিভারিম্যানরা তাঁদের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তখনই সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন, যখন আমরা তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করব। আর সে জন্য সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাঁদের যেন কর্মক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নানা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত রেখে অনুপ্রাণিত করা হয়।

আসুন আমাদের উপকারে নিয়োজিত এ ডেলিভারিম্যানদের আমরা প্রাপ্য সম্মানটুকু দিই। পারিপার্শ্বিক কারণে ডেলিভারি দিতে একটু দেরি হলেও তাঁদের সঙ্গে কলহে না জড়াই। আর এভাবেই পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও সম্প্রীতিতে আবদ্ধ হয়ে এগিয়ে নিই এই পৃথিবী।

তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম