রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে  ফিটনেসবিহীন যানবাহন।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে মুক্তি চাই

নগরবাসীর এক দুর্ভোগের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। এক সূচকে উঠে এসেছে, দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে। প্রতিবছর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে এসব যানবাহন দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছুতেই যেন আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না। এসব যানবাহনের জন্য প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিআরটিএর এক সমীকরণে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। এটি শুধু আর্থিক হিসাব। প্রতিবছর ফিটনেসবিহীন গাড়ির দুর্ঘটনার কারণে বহু পরিবার তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আর্থিক দুরবস্থায় পড়ছে।

আজ দেশের মহাসড়কগুলো যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এক সমীকরণে দেখা যায়, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে মালিকপক্ষ যে রং করে থাকে, তা ১০ দিন পরই উঠে যায়। কিন্তু প্রতিবছর এসব ব্যয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে বাসমালিকপক্ষ। সড়কে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহনের জন্য প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। এর মধ্যে অন্যতম সড়কে চলাচল করা বাসগুলো।

কিছু বাস এতটাই লক্কড়ঝক্কড় যে যাত্রী বহনে অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও চলাচল করছে এবং যাত্রীরাও বাধ্য হয়েই এসব বাসে যাতায়াত করছে। এই প্রচণ্ড গরমে ঢাকায় বাসে চলাচল করা অধিকাংশ যাত্রীই নিদারুণ কষ্টে চলাচল করে। এসব গণপরিবহনে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। বেশির ভাগ বাসের ছাদ থাকে ভাঙা, যা থেকে সূর্যের আলো এসে বাসের ভেতরে পড়ে গরমের তীব্রতা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক গণপরিবহনে ফ্যান নেই, থাকলেও বেশির ভাগই বিকল।

এক জরিপে দেখা, দেশের ২৪ শতাংশ যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য নয়। ফিটনেস নেই ৩৩ শতাংশ বাসের এবং ৫৬ শতাংশের নেই স্পিড গভর্নরের সিল। এ জরিপই পরিষ্কার করে দেয় যে আজ দেশের যানবাহনগুলো কতটা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া ও বিকট শব্দ পরিবেশ দূষিত করে, এর কারণে দেশের সাধারণ জনগণ আক্রান্ত হয় নানা অসুখ-বিসুখে। অন্যদিকে এসব গাড়ির চালকদের বেশির ভাগেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেকেই গাড়িচালকের সহকারী থেকে চালক হন। এসব চালকের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও তাঁরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের সড়ক-মহাসড়কে। এসব চালকের একটি বড় অংশ গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন, এ কারণে সড়ক-মহাসড়কে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর একটি অংশে সিএনজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব গ্যাস সিলিন্ডারের বেশির ভাগেরই নেই কোনো মেয়াদ। এ কারণে প্রায়ই এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং এতে অনেক যাত্রী হতাহত হয়। এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির আধিপত্য বন্ধ করতে প্রতিনিয়ত তদারক করতে হবে, লাইসেন্স চেক করতে হবে, সার্টিফিকেট ও সিল সিস্টেম চালু করতে হবে, জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ও দুর্ঘটনার হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

তাই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাইনুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা