বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এখন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির সম্মুখীন। বৃক্ষ নিধন, বনভূমি উজাড় ও বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর বায়বীয় গ্যাসের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে সেখানে প্রভাব রাখছে।
দক্ষিণ এশিয়ার হাতির অন্যতম ‘প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪–এর আলোকে ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চকরিয়া ও বাঁশখালী এলাকায় ১৯ হাজার ১৭৭ একর (৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর) বনভূমি নিয়ে গড়ে ওঠে চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য।
বনাঞ্চল সুরক্ষা, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে চুনতি ও জলদি রেঞ্জের অধীনে ৭টি বিট অফিস স্থাপন করা হয়। এই অভয়ারণ্যের বুক চিরে গেছে দীর্ঘ ১২৯ কিলোমিটার দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন, যেটির শেষ হবে ঘুনধুমে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বনভূমি, পাহাড়, নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে।
এরই প্রেক্ষিতে রেললাইন নির্মাণে কাটতে হয়েছে উঁচু–নিচু অসংখ্য পাহাড়। এতে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গড়ে তুলেছেন মাটি বাণিজ্য। রেললাইন প্রকল্পের অজুহাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাহাড় কেটে চুনতি অভয়ারণ্যকে বিরান জনপদে পরিণত করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণীর আধার চুনতি অভয়ারণ্যের বনভূমি বিলীন হচ্ছে।
২০১২ সালে বন ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের ইকুয়েটর পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশ। জীববৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার বিভিন্ন উদ্যোগ বা প্রকল্পকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশের প্রকল্পটির নাম চুনতি কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি।
অবৈধভাবে বনভূমি উজাড় প্রতিরোধ করতে, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য সুসংহত করতে চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রয়াস এই অভয়ারণ্যকে আরও টেকসই, চিরহরিৎ, বিস্তৃত ও পত্রপল্লবে সজ্জিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
আনোয়ার ইব্রাহিম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
anwarrasima2002@gmail.com