বিশ্বের যেসব দেশে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বিশ্বের যেসব দেশে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

উচ্চশিক্ষায় বাজেট নিয়ে এমন কার্পণ্য কেন

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে জাতির কাঠামো আর বাজেট হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণশক্তি। অর্থাৎ বাজেট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আত্মাহীন দেহের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয় উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার এবং মেধাবীদের মিলন মেলা। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে। কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বাজেট বরাদ্দ থাকে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত অর্থবছরে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১২ হাজার ১৮৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। গত অর্থবছরে গবেষণা খাতে জন্য ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমে হয় ১৪৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হলেও অনুমোদিত সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেটে মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বরাদ্দে কেন এত কার্পণ্য এর কোন জুতসই ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বরাদ্দ কোনো খরচ নয়, বরং বিশাল বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। যেসব দেশ এটি বুঝতে পেরেছে, সেসব দেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আসবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, যারা তাদের সৃজনশীল চিন্তা, মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, স্মার্ট ক্লাসরুম ও ল্যাব স্থাপন, আধুনিক লাইব্রেরি স্থাপন, উন্নত আবাসনব্যবস্থা, পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক বিষয়ে মানসম্পন্ন গবেষণা এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ থাকা একান্ত জরুরি।

এবার জাতীয় বাজেটের প্রায় ১১ শতাংশ ৮৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা থাকলে আমাদের দেশে তা মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বাড়ানো না হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হুমকির মধ্যে পড়বে এটা ধারণা করা অসম্ভব নয়।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস ২০ তম সংস্করণে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিং ২০২৪ এর তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ পাঁচ শ'র মধ্যে স্থান পায়নি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশনের ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৪থ প্রকাশিত হয় গত ৩০ এপ্রিল। এশিয়ার ৩১টি দেশের মোট ৭৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা তালিকায় শীর্ষ তিন শতে নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এর একমাত্র কারণ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম। বরাদ্দ কম মানে গবেষণা এবং শিক্ষার গুণগত মানও কম।

বিশ্বের যেসব দেশে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও সর্বনিম্ন। বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে বলে আসছেন, কিন্তু বিগত বছরের বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি থাকলেও সেটি পূরণ হয়নি।

এবার জাতীয় বাজেটের প্রায় ১১ শতাংশ ৮৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা থাকলে আমাদের দেশে তা মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বাড়ানো না হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হুমকির মধ্যে পড়বে এটা ধারণা করা অসম্ভব নয়। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মহা মেগা প্রকল্প হিসেবে নিলে এর সুফল পাবে দেশ ও জনগণ।

মো. আনোয়ার হোসেন  
শিক্ষার্থী গণিত বিভাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর