এই কোটা ব্যবস্থা থাকলে বেকারত্ব ও দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়বে

নানা চড়াই-উতরাই পার করে যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান, তাদের বেশির ভাগের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি ভালো সরকারি চাকরি পাওয়া। নয়তো উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে সেখানে ক্যারিয়ার গড়া অথবা দেশে ব্যবসা করা।

প্রত্যেক দেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরির জন্য কিছু বাছাই প্রক্রিয়া রয়েছে, বাংলাদেশেও এমন প্রক্রিয়া রয়েছে। বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বেকারত্বের তুলনায় কর্মসংস্থান কম। সে কারণে বিদেশে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি চাকরি পেতে একটি শূন্য পদের বিপরীতে কয়েক শত চাকরিপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ক্রমেই সে সংখ্যা আরও বেড়েই চলেছে।

একদিকে পূর্বে যারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এবং বর্তমানে যারা পাড়ি জমাচ্ছেন, তাঁদের ফিরিয়ে এনে তাঁদের অর্জিত জ্ঞানকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে, নতুন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং পুনরায় কোটা পদ্ধতি চালু করার ফলে তরুণ মেধাবীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা আরও বেশি দেখা দিতে পারে। যার ফলে দেশে এক সময় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গুণগত মানের শিক্ষকের অভাব দেখা দেবে।

সরকার যদি মেধাবীদের দিয়ে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করতে চায় তাহলে সবার প্রথমে যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। অধিক পরিমাণে আবেগ দিয়ে পৃথিবীতে কোনো দেশ কখনো পরিচালিত হয়নি এবং পরিচালনা করা সম্ভবও নয়।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরি পেতে এমনিতেই খুব বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে, ঘাম ঝরাতে হচ্ছে; অন্যদিকে কোটার জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। অর্থাৎ কোটা পদ্ধতি ফিরে আসার সম্ভাবনায় বেকারদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল হওয়া মানে চরম বৈষম্য তৈরি হওয়া। এই ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল থাকলে কেউ সারা দিন পড়ার টেবিলে, লাইব্রেরিতে বা রিডিং রুমে মাথা গুঁজে পড়লেও চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, একটি মন্ত্রণালয়ে ১০০ জন নিয়োগ দেবে সরকার, তার মধ্যে ৫৬ জনের কোটা সুবিধা থাকবে। প্রশ্নফাঁস বা লবিংয়ের বিষয় থাকলে সে কারণেও কিছু পদ থাকবে না। ফলে বাকি পদগুলোর জন্য হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।

এদিকে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ত্রিশ, কিন্তু কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সেশনজট থাকায় চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে দেরি হয়ে যায়। সে কারণেও আবার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে এবং বাড়ছেও।

তবে কোটা বাতিল হলে কিংবা কোটা সংস্কার হলে একদিকে যেমন সরকারি চাকরির পথটা অনেক সহজ হবে, অন্যদিকে বহু শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমানো থেকে বিরত থাকবে এবং বেকারত্বের চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।

যদি কোনোভাবেই কোটা বাতিল বা সংস্কার না করা হয় তখন এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি সংকটে পড়বে দেশ। বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী পূর্বের তুলনায় আরও বেশি বিদেশমুখী হবে। সারা বিশ্বে অনগ্রসর গোষ্ঠী বা মানুষদের সমতায় নিয়ে আসার জন্য কোটা প্রথা চালু আছে। বাংলাদেশেও সেই অনুসারে কোটা প্রদান করা যেতে পারে, তবে নির্দিষ্ট সীমা রেখে। এবং একটি কোটা সুবিধা বারবার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, নয়তো সমতার চেয়ে সমাজে অসাম্য তৈরি হবে।

মো. হেলাল মিয়া
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।