জন্মনিবন্ধন, জন্মনিবন্ধন সংশোধন ও এবং ইংরেজি অনলাইনের জন্য প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ওপর এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় ভোগান্তি আরও বাড়ছে। সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে অভিভাবকদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জন্মনিবন্ধন করার শর্ত হিসেবে কোথাও কোথাও হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ ও ভূমির নামজারির খতিয়ানও চাওয়া হয়! ভোটার তালিকা, স্কুলে ভর্তি ও পাসপোর্ট করাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্মনিবন্ধন অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে অফিসে ঘুরছে সাধারণ জনগণ।
ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভায় ছেলে–মেয়ের জন্মনিবন্ধন করতে অভিভাবকদের কমপক্ষে চার-পাঁচবার নিবন্ধন কার্যালয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করে দিতে হয়। তার সঙ্গে নতুন জন্মনিবন্ধন করতে গুনতে হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। আর সংশোধন করতে গুনতে হয় ৮০০-১০০০ টাকা, বয়স সংশোধন করতে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার চায় ইউনিয়ন সচিব।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শিশুর বয়স ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের ওপরে সব বয়সীর ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধনের জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদন ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় জন্মনিবন্ধন কার্যালয়ে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাড়তি টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
দেশে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। ভুল সংশোধনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে যেতে হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও। তবুও হয়রানি ও ভোগান্তির শেষ নেই সাধারণ জনগণের।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ–৭ অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুরই জন্মের পর নিবন্ধন করার কথা বলা আছে। দেশের জাতীয় শিশুনীতি ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৬-এ সব শিশুর জন্মনিবন্ধন নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। দেশে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় বলছে জন্মনিবন্ধন শিশুর মৌলিক অধিকার, যা রাষ্ট্রীয় অধিকার লাভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু শিশুর সেই মৌলিক অধিকার লাভে পূর্বশর্ত জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তির শেষ নেই। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন করছেন, মৌলিক অধিকার হলে এত ভোগান্তির শিকার হতে হবে কেন? অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে ঘুষ দিয়েও জন্মনিবন্ধন করাতে হচ্ছে। সামান্য ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ৪ অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়েও মাসের পর মাস দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন নাগরিকেরা।
মামুন রাফী
হাতিয়া, নোয়াখালী