হাফ ভাড়া শুধু ঢাকায় কেন, এ নিয়ে কেন আইন হবে না?

বাংলাদেশে পরিবহনভাড়া নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে চলছে রীতিমতো নৈরাজ্য। জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাড়া; কিন্তু জ্যামিতিক হারে কি বাড়ছে মানুষের আয়?
শিক্ষার্থীদের তো আরও সংকট। একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধি, এতে দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। এমতাবস্থায় সব শিক্ষার্থীর দাবি ছিল, পরিবহনে যেন হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেই দাবি মানলেও যেন বৈষম্য থেকেই গেল। কারণ, রাজধানী শহরে শুধু ছাত্রছাত্রী থাকে না। সারা বাংলাদেশে চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কী হবে? তাদের জন্য কেন এই হাফ ভাড়া প্রযোজ্য হবে না?

আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দেশের নির্বাহী পদের ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সারা বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর ও জেলাগুলোর জন্য হাফ ভাড়ার আদেশ সরকারিভাবে দেওয়া হোক। সেই মোতাবেক সেটি কার্যকর করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আপনাদের সুদৃষ্টি ও আগ্রহই পারে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিতে।

বৈষম্যমূলক কোনো সিদ্ধান্ত কখনো একটি দেশ ও সমাজের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি ছাড়া আয়ের তেমন কোনো উৎস না থাকাতে নিজেদের বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য। সরকার, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে গাড়িভাড়া হাফ পাস নিয়ে গাড়িচালকেরা মানতে চান না। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা আন্দোলনের পর যদিও শুধু ঢাকাতে হাফ ভাড়া কার্যকরের বিষয়টি ঘোষণা এসেছে পরিবহন মালিকপক্ষের কাছ থেকে। কিন্তু সেটি কত দিন কার্যকর থাকে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। হাফ ভাড়ার বিষয়টি ৫৭ বছর আগে থেকে প্রথা হিসেবে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত আইনে পরিণত হয়নি। কিন্তু এত আন্দোলনের পরও কেন লিখিত আকারে আইন পাস হচ্ছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন!

সরকারি প্রজ্ঞাপন বা ঘোষণা না থাকলেও স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমল থেকে তারা এই অধিকার ভোগ করে এসেছে। সম্ভবত ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি বাস দিয়ে হাফ পাস ভাড়া পদ্ধতি চালু হয়। ইতিহাস বলছে, আন্দোলন করে ছাত্ররা এই অধিকার অর্জন করেছে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির একটি ছিল ‘হাফ ভাড়া’ নির্ধারণ। আবার ২০১৮ সালেও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ঢাকা অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির ভেতরে অন্যতম ছিল, শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এত আন্দোলনের পরও কোনো লিখিত আইন করা হচ্ছে না। শুধু মৌখিক নির্দেশনা। যার জন্য কোনো শক্তিশালী ভিত্তি নেই এই আইনের। তাই কর্তৃপক্ষের লিখিত আইন পাসের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

আসাদুজ্জামান বুলবুল
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মাজহারুল ইসলাম শামীম
শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।