চিঠিপত্র

সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ান, মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দিন

সচেতন নাগরিক এখন খুব অসহায়। বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্রে সুদ কমা ইত্যাদি কোনও কিছুর জবাব কর্তৃপক্ষকে দিতে পারে না। আর্থিক সংস্কারকে নির্দয়ভাবে সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া যেন বিকল্প কোনও পথ নেই।

ভোজ্য তেলের দাম এখন অসহনীয় জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তবু কোথাও কোনও সুরাহা নেই। বাড়ছে চাল, আটা, ডাল, চিনি, মুদিসামগ্রী, আনাজ সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তা যেন সপ্তাহে সপ্তাহে বেড়েই চলছে। এ-ও শোনা যাচ্ছে, শুধুমাত্র আশঙ্কা ও রটনা থেকেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আর তাতে একদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিরিক্ত লাভবান হচ্ছে, তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।

এদিকে দেশে চাকরি তৈরির কোনও সুযোগ হচ্ছে না। দেশি কলকারখানা, বিভিন্ন ছোটখাটো শিল্পও ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবুও কারও কাছে জবাবদিহি চাওয়ার যেন কোনও সুযোগই নেই। সব ইস্যুকেই পোশাক শিল্পের কর্মী আন্দোলনের মতো লড়াই করে তোলা সম্ভবও নয়, বাস্তবও নয়। কিন্তু যদি সেটা করা যায়, তবেই একমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পেনশনধারী-সাধারণ মানুষদের সঞ্চয়পত্রে সুদ বাড়াতে বা আগে যেরকম সুদ ছিল তা করাতে বাধ্য করা যাবে।

যখন রেকর্ড হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, তখন পেনশনধারী-সাধারণ সঞ্চয়পত্রের সুদ কিছুটা বাড়ানোই সাধারণ মানুষের কাম্য ছিল। মূল্যবৃদ্ধির জেরে এমনিতেই মানুষের প্রকৃত আয় কমে যেতে থাকে। এই অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদ কিছুটা বাড়লে একটা বিপুল অংশ আয় বৃদ্ধির অনুভূতি পেতে পারত। যাদের সঞ্চয়পত্র আছে তাদের একেকজন সদস্য একেকটা পরিবার। অর্থাৎ পেনশনধারী-সাধারণদের সঞ্চয়পত্রে সুদ বাড়লে অসংখ্য পরিবার উপকৃত হতে পারত।

দুঃখ হলেও সত্য যে, মূল্যবৃদ্ধির বোঝাটা দেশের আমজনতার পিঠ থেকে কিছুতেই নামতে চাইছে না। মহামারির দীর্ঘ সংকটকাল কাটিয়ে আসার পর এখন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। আবার সামনে রমজান মাস। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ার হেতুর অভাব নেই। যদিও, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধিতে যাদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে হয়, তাদের কাছে অবশ্য মোটেই স্পষ্ট নয় করোনা মহামারি বা যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বাংলাদেশ যুক্ত নয়, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে কতটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলেই সারা দেশে সাধারণ মানুষকে বেশি টাকা দিয়ে জিনিস কিনতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধসহ কত কী বিষয়কে ঢাল করছে। যদি মহামারি কিংবা যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হয়েও থাকে, তবে পেনশনধারী-সাধারণদের সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়িয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে স্বস্তি দিতে সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দেওয়া ও তা স্থায়ী করা।

লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা