শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। বাংলাদেশে শিক্ষাস্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। একটি শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রাথমিকের শিক্ষক হচ্ছেন শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথপ্রদর্শক। কিন্তু সেই শিক্ষকেরা কতটুকু মূল্যায়িত হন? সমাজের সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য পেশার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষকতার এই পেশা?
বাস্তবতা হচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নানা ধরনের বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার। এর মধ্যে শিক্ষকদের প্রদেয় টিফিন ভাতা অন্যতম। প্রাথমিকের শিক্ষকদের মাসিক টিফিন ভাতা বাবদ ২০০ টাকা দেওয়া হয়, যা গড়ে সাড়ে ৬ টাকার সামান্য বেশি, প্রায় ৬ টাকা ৬৬ পয়সা পড়ে। বর্তমান সময়ে এই যৎসামান্য টাকা দিয়ে এক কাপ চা-ও পাওয়া যায় না। প্রাথমিকের শিক্ষকদের স্কুলে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য হালকা নাশতা করে খুব সকাল সকাল বের হতে হয়। অনেকেই আবার নাশতা না করেই বের হয়ে পড়েন। সেই বিবেচনায় এ টিফিন ভাতা কি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্কুলে পাঠদান ও নানা কর্মকাণ্ড সারতে হয়। এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা একজন শিক্ষকের জন্য যেমন কষ্টকর, তেমনি ক্লাসে মনোযোগী হওয়াটাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শিক্ষকদের টিফিন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সেদিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বিমাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুপুরের খাওয়ার ভাতা হিসেবে পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া হয়, অনেক অফিসে খাবারের জন্য ভর্তুকিও দেওয়া হয়। সে তুলনায় প্রাথমিকের শিক্ষকেরা শুধু বঞ্চিতই না, রীতিমতো বৈষম্যের শিকার।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের টিফিন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী নিয়োগ পাচ্ছেন। বিষয়টিকে আরও বেশি উৎসাহিত করা উচিত। শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে একটি শিক্ষিত, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার ক্ষমতা। আশা করি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিফিন ভাতা বাড়ানোর প্রতি সুনজর দেবে।
মো. আশরাফুল ইসলাম
শাহবাগ, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ