ইংরেজি ভাষায় ‘বুলিং’ বলতে কাউকে মানসিকভাবে আঘাত করার উদ্দেশ্যে তাকে বারবার বিভিন্নভাবে হয়রানি করাকেই বোঝায়। বুলিংয়ের ক্ষেত্রে সব সময়ই কোনো না কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে অপদস্থ করতে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করাই বুলিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। বুলিং নানাভাবে হতে পারে। এর মধ্যে শারীরিক, মৌখিক, মানসিক, আবেগীয়, সাইবার, জাতিগত, যৌন হয়রানিমূলক নানা ধরনের বুলিংয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত। বুলিং করার মাধ্যমে ভাষার অসম্মানও করা হয়।
বর্তমান বাস্তবতায় বুলিং একটি রীতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে অপব্যবহার করে অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে বুলিং করতেও দেখা যায়। বুলিং যুগ পরিক্রমায় শিশু-কিশোর বয়সীদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায়। সাইবার দুনিয়ায় অন্যকে বুলিংয়ের মাধ্যমে হয়রানি বা হেয় করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সাথে জনসম্মুখে যে কারও মৌখিক বুলিংয়ের শিকার হওয়ার মাত্রাও বেড়েই যাচ্ছে। মৌখিক বুলিং মানে কাউকে মৌখিকভাবে অপমান করা, খারাপ কথা বলা, হুমকি দেওয়া, আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলা, অযথা ভয় দেখানো, কটাক্ষ করা ইত্যাদি। মৌখিক বুলিংয়ের মাধ্যমে বুলিং করা ব্যক্তি নিজেকে অন্যের থেকে আলাদাভাবে বা ওই ব্যক্তির থেকে নিজেকে অনেকটা এগিয়ে রাখতে চায়।
কেবলমাত্র প্রযুক্তির দিক থেকেই নয়, প্রকৃতির নিয়মে গড়া মানুষের দৈহিক কাঠামো নিয়েও আমরা মানসিক হয়রানির শিকার হয়ে থাকি। দৈহিক কাঠামোর অংশ হিসেবে কারও বয়সানুযায়ী অধিক উচ্চতা হলে বেশি উচ্চতার কোনো বস্তু বা প্রাণীর সাথে আর কম উচ্চতা হলে বামন কিংবা কম উচ্চতাসম্পন্ন প্রাণী, বস্তুর সাথে তুলনা করে হাসির পাত্র বানায়। এ ছাড়াও গায়ের বর্ণ নিয়ে বুলিং তো আছেই।
পেশাগত দিক থেকে স্বল্প আয়ের উপার্জনকারী হওয়ার জন্যও অনেকের অন্যের কটু কথার শিকার হতে হয়। নিজের পেশাগত পরিচয় দেওয়ায় কারও কারও কাছে অসম্মানিতও হতে হয়। এরূপ আচরণও একপ্রকার মৌখিক বুলিং। ফলে কিছু মানুষ লোক সম্মুখে আত্মসম্মাননের ভয়ে নিজের পেশার পরিচয় দিতেও দ্বিধা বোধ করে।
এমনকি নিজ মাতৃভাষা বাংলার বদলে অনর্গল ইংরেজি ভাষায় কথা বলাও এখন স্মার্টনেসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কথাবার্তায় নিজ আঞ্চলিক ভাষাকেও অনেক ক্ষেত্রে জনসমক্ষে বাদ দিতে হয়; মনের ভাব প্রকাশে তথাকথিত শুদ্ধ ভাষাকেই বাধ্য হয় একান্ত সঙ্গী করতে হয়।
নানাভাবে মৌখিক বুলিংয়ের শিকার হয়ে ব্যক্তি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার জন্য ব্যক্তি তখন নিজেকেই দায়ী করে। ফলে কেউ কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে আত্মহননের পথও বেছে নেয়। শুধু তরুণ প্রজন্ম বা প্রাপ্ত বয়স্কই নয় একটি শিশুর সহজাত মানসিক বিকাশেও বুলিং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। একটি শিশুর মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতে বুলিং-মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
সুরাইয়া
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়