চিঠিপত্র

আসুন, মানুষের তরে হাত বাড়িয়ে দিই

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক ধরে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন দুজন। বর্ণি এলাকা, কোম্পানীগঞ্জ
ছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সেই সঙ্গে ভারতের আসাম ও মেঘালয় হতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আসায় এবং সিলেট সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভরাট হওয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এ বন্যার কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সকল স্তরের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বন্যায় কবলিত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শহর অঞ্চলের সমস্ত রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট, বাসস্থান, পুকুরের মাছ। গোলা ভরা ধান, গোয়ালের গরু, বসবাসের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও এখন পানির নিচে। অত্র অঞ্চলের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে বাইরে হাঁটু সমান পানি, দাঁড়ানোর মতো এক টুকরো জায়গা অবশিষ্ট নেই।

সন্তানের শেষ আশ্রয়স্থল তার অভিভাবক, কিন্তু পানির উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় সন্তানের জীবন বাঁচাতে বাবা মা হাঁড়ি-পাতিলের ভেতরে বসিয়ে পানিতে ভেসে দিচ্ছে; যেন সন্তানের ক্ষতি না হয়। আবার অনেকে বন্যার ভয়াবহ প্রকোপে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান নিয়েছে।

শিশু, বয়োবৃদ্ধের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কষ্ট বেশি। সিলেট, সুনামগঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চলের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে তারা বাইরের কোনো জেলার সাথে সংযোগ করতে পারছে না। রান্না-বান্না বন্ধ, সকল নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। শুকনো রুটি, বিস্কুট, গুড় ও চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছে আছে অনেক মানুষ। অসহায়ত্ব কাকে বলে তা অত্র অঞ্চলের মাটি ও মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে অনুভব করছে। গত শুক্রবার (১৭জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় যে, জুম্মার নামাজ পানিতে দাঁড়িয়ে আদায় করছেন বন্যা কবলিত লোকজন। পানির উচ্চতা এত প্রবল বেগে বাড়ছে যে, এখন সেই দাঁড়ানোর মতো জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন এই অসহায় বানভাসি মানুষদের বেশি জরুরি উদ্ধার অভিযান। অভিযান না হলে তারা কঠিন বিপদের মুখে পড়বে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কাজ করছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

আসুন সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সব ভেদাভেদ ভুলে বন্যার্তদের রক্ষায় এগিয়ে আসি। এখন প্রয়োজন বন্যার্তদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। সারা দেশের সার্মথ্যবান মানুষজন তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়াই। বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থল খুলতে হবে এবং খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারি। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুবসমাজসহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বড় বড় করপোরেট কোম্পানি, বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন পত্রিকাগুলো ত্রাণ তহবিল গঠন করে সাহায্য করতে হবে।

এ রকম জাতীয় সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সকলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী ভূমিকায় দেখতে চাই। সরকারকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বন্যার্ত ও সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। তাদের দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। বন্যা কবলিত অঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সরকার পাশে দাঁড়াবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বানভাসি মানুষ মুক্ত হোক এই প্রত্যাশা করি।

আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও
ইমেইল: asikurrahman81@gmail.com