নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম

বিশেষ সাক্ষাৎকার: নজরুল ইসলাম

সংসদকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পূর্বশর্ত আনুপাতিক নির্বাচন

এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও গবেষক। সম্প্রতি রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিয়াদুল করিম

প্রশ্ন

এখন সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন, রাষ্ট্র সংস্কার—এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংস্কারের জন্য কিছু কমিশনও গঠিত হয়েছে। আপনি রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি প্রস্তাবের কথা বলেছেন। সেগুলো কী?

নজরুল ইসলাম: এখন যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা ইতিবাচক। তবে এসব আলোচনার মধ্যে তিন ধরনের দুর্বলতা দেখা যায়। বিভিন্নজন রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করছেন। কিন্তু সেগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তারিত যুক্তি দিচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে যে আন্তসম্পর্ক আছে, অর্থাৎ একটা করলে আরেকটা করার প্রয়োজন হয় না। আবার একটা করতে হলে পূর্বশর্ত হিসেবে আরেকটা করতে হবে। এগুলো আলোচনায় আসে না। তৃতীয়ত, সংবিধান সংশোধনের কথা হচ্ছে। কোনো রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কী সংশোধনের প্রয়োজন, এ জিনিসগুলো পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে না।

আমার প্রস্তাবের উদ্দেশ্য এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আলোচনাটাকে আরও অর্থবহ করা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি ১১টি প্রস্তাব দিয়েছি। আমি যে ১১টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি তা হলো, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য, প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করা, সরকারের মেয়াদ হ্রাস, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং আনুপাতিক নির্বাচন।

প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। এটি কীভাবে হতে পারে?

নজরুল ইসলাম: এটা করার কয়েকটি উপায় আছে। একটি হলো, রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত করার বিধান করা। কিন্তু তখন সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকে না। এটা রাষ্ট্রপতিশাসিত বা সংকর পদ্ধতি হয়। দেশে যেমন জিয়াউর রহমান, এরশাদের আমলে ছিল। তখন যদিও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু কে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তা মানুষের মনেও নেই। কারণ, তখন সরকার আসলে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে পর্যবসিত হয়েছিল।

সংসদীয় ব্যবস্থা বজায় রেখেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়, তাই রাষ্ট্রপতিও সেভাবে নির্বাচিত হন। এ জায়গায় পরিবর্তন আনা যায়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে সংসদের দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে, এমন বিধান করা যায়। এটা হলে কোনো দল যদি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করেও দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে তার প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর জন্য বিরোধী দলের সমর্থন লাগবে। এটা হলে এমন লোকের নাম প্রস্তাব করতে বাধ্য হবে, যাঁর বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতা আছে। এতে ‘দলকানা’ কেউ রাষ্ট্রপতি হবেন না।

তবে সরকারি দল দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। সরকারি দল জিম্মি হয়ে যেতে পারে। এটা নিরসনের উপায়ও আছে। জার্মানি, ইতালিতে এটার চর্চা আছে। তখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি শুধু সংসদে সীমাবদ্ধ রাখা হয় না। জাতীয় সংসদের সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন। সেখানে যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন, তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।

প্রশ্ন

এখন যেভাবে সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেখানে পরিবর্তন না এনে শুধু নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তন করে কি ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে?

নজরুল ইসলাম: দুটোই লাগবে। রাষ্ট্রপতিকে যদি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হয়, তাহলে সম্পূর্ণ দলীয় ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা কঠিন হবে। অধিকতর স্বাধীন একজন রাষ্ট্রপতি পাওয়া যাবে। এর বাইরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতারও কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরিবর্তন না আনা হলে লাভ হবে না। কারণ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যদি সম্পূর্ণ সরকারি দলের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে সংবিধানে কাগজে–কলমে যা–ই লেখা থাক, কার্যত রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই কাজ করবেন।

এখানে পূর্বশর্ত হচ্ছে, সংসদ আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা এটার জন্য পূর্বশর্ত। এটি হলে অনেক বেশি দল সংসদে যেতে পারবে এবং কোনো একটি দলের পক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সহজ হবে না।

প্রশ্ন

আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা আছে কি না?

নজরুল ইসলাম: এটা আসলে যতটা নির্বাচনব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। সরকার ঝুলন্ত হবে কি না বা জোট সরকার হবে কি না, এগুলো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। শুধু আনুপাতিক পদ্ধতি হলেই জোট সরকার হবে এমন নয়। আমাদের দেশেও অতীতে জোট সরকার করার নজির আছে। তবে আনুপাতিক ব্যবস্থায় বেশিসংখ্যক দলের সংসদে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সে জন্য জোট সরকার করার প্রয়োজনীয়তা বেশি হতে পারে।

প্রশ্ন

অনেকে বলছেন, ছোট দলগুলো নিজেদের স্বার্থে আনুপাতিক পদ্ধতির কথা বলছে। বড় দলগুলো নিজেদের স্বার্থে বিপক্ষে বলছে। আপনি কী মনে করেন?

নজরুল ইসলাম: সেটা ঠিক, যে যার যার স্বার্থের কথা বলবে। তবে দেখতে হবে, দেশের স্বার্থ কোনটিতে বেশি রক্ষিত হবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। কিন্তু আসন পেয়েছিল প্রায় ৭৭ শতাংশ। বর্তমান ব্যবস্থায় একটি দল ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েও দুই–তৃতীয়াংশ বা তার বেশি আসন পেয়ে যাচ্ছে।

কোনো দল যখন দুই–তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে যায়, তখন তারা যা খুশি তা–ই করতে পারে। সংবিধানকে যেভাবে খুশি পরিবর্তন করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সে দল বা দলের নেতা স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারেন। এ জন্য আনুপাতিক নির্বাচন প্রয়োজন। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তারা সেই অনুপাতে সংসদে আসন পাবে।এটাই ন্যায্য।

এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তাতে যাঁদের অর্থ, পেশিশক্তি, প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে, তাঁরা বেশি নির্বাচিত হন। আনুপাতিক পদ্ধতিতে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির সংসদে আসার সুযোগ থাকে। এতে রাজনীতির মানটাই বদলে যাবে।

প্রশ্ন

কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতিতেও টাকা দিয়ে প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। কারণ, তাঁকে মাঠে গিয়ে ভোট করতে হবে না। দলীয় তালিকায় নাম থাকলেই হলো।

নজরুল ইসলাম: এখন কী হচ্ছে? বড় দলগুলো একটি মনোনয়ন বোর্ড করে। এখানে কয়েকজন সদস্য থাকেন। দলীয় প্রধান এই বোর্ড ঠিক করেন। প্রার্থী মনোনয়নের পুরো প্রক্রিয়াটা খুব অস্বচ্ছ। নমিনেশন বোর্ডের সদস্যরা ছাড়া দলের অন্যদের কোনো অংশগ্রহণ সেখানে থাকে না। চার বছর এলাকায় নেই, কোনো দলীয় প্রচারে নেই, কিন্তু ভোটের আগে অনেকে এসে কীভাবে কীভাবে যেন মনোনয়ন পেয়ে যান। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, তাঁরা দলকে বড় ডোনেশন দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে নমিনেশন পান।

আনুপাতিক পদ্ধতিতে দলকে প্রার্থী তালিকা ঠিক করতে হবে। এটা দলের সভাপতি কিংবা চার–পাঁচজন করলেও হবে না। এটার জন্য দলের সম্মেলন লাগবে। সম্মেলনে সব ডেলিগেটের সমর্থন নিতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এখানে কয়েক হাজার ডেলিগেটকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা কঠিন হবে। এখানে বলতে পারেন যে দলের নেতা বলে দেবেন, ‘অমুককে দাও’।

এ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, প্রার্থী তালিকার দায়িত্ব নেওয়াটা কঠিন হবে। কারণ, নমিনেশন দেওয়ার পর জয়ী হয়ে আসাটা অনেকটা প্রার্থীর দায়িত্ব। আনুপাতিক পদ্ধতি হলে প্রার্থী তালিকার পক্ষে পুরো দলকে পেতে হবে। পুরো দলের সম্মতির ভিত্তিতে করতে হবে। প্রার্থী তালিকা খারাপ হলে দায় দলের ওপর আসবে। তালিকাসহ দল নির্বাচনে যাচ্ছে। তালিকা দেখে মানুষ ঠিক করবে, এই দলকে ভোট দেবে কি না।

প্রশ্ন

আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়নি। কোনো ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া আগামী নির্বাচনে এটি চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

নজরুল ইসলাম: গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় সব দলই এই পদ্ধতির পক্ষে—আমার কাছে এমনটাই মনে হচ্ছে। একমাত্র বিএনপি এটার পক্ষে না। বিএনপি রাজি হলে বলা যাবে এই প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে।

প্রশ্ন

বিএনপির জন্য তো বিদ্যমান পদ্ধতিই লাভজনক। তাহলে তারা কেন রাজি হবে?

নজরুল ইসলাম: বিএনপি বলছে, তারা স্বৈরাচারের পুনরাবির্ভাব চায় না। এ কারণেই আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন প্রয়োজন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকবার বলেছেন, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। এটার জন্যও আনুপাতিক নির্বাচন প্রয়োজন। জাতীয় সরকার গঠন করতে সংসদে অন্যান্য দলের উপস্থিতি লাগবে। অনেকে হয়তো মনে করছেন, আনুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপির আসন কমবে। কিন্তু আনুপাতিক নির্বাচনে তাদের আসন বাড়তেও পারে।

আমি বিএনপিকে দূরদৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানাব। তাহলে বিএনপি বুঝতে পারবে, দীর্ঘ মেয়াদে এটা তাদের জন্য ভালো হবে। কারণ, ভোটের অনুপাতের চেয়ে কম আসন তারা কখনো পাবে না। ২০০৮ সালে বিএনপি ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশ। আনুপাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করলে এ ধরনের বিপর্যয় তাদের মোকাবিলা করতে হবে না।

প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারতের মতো দেশগুলো আনুপাতিক পদ্ধতিতে যায়নি। কিন্তু সেখানে তো স্বৈরাচারও মাথাচাড়া দেয়নি?

নজরুল ইসলাম: ঐতিহাসিক সূত্রে ব্রিটিশদের কাছ থেকে আমরা দেশের বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা পেয়েছি। একসময় যেসব দেশ ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল, সেই দেশগুলোতে এ রকম ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্রেও সেভাবে হয়েছে। কিন্তু এখন স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের মতো দেশগুলো আনুপাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ইংল্যান্ডও ক্রমেই এ পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারতের মতো দেশে স্বৈরাচারী প্রবণতা নেই—এটা যতটা না নির্বাচনব্যবস্থার জন্য, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, সেই দেশগুলোর গণতন্ত্র অনেক উন্নত। আমাদের দেশের সরকারগুলো সহজেই স্বৈরাচার হয়, তার কারণ, এখনো তাদের মনমানসিকতা, আচার-আচরণে সামন্তবাদী মনোভাব রয়ে গেছে। এটা প্রতিরোধের জন্যই আনুপাতিক নির্বাচন প্রয়োজন।

প্রশ্ন

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা অনেকে বলছেন। এটা কেন জরুরি?

নজরুল ইসলাম: আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। অনেকে যুক্তি দেন, এটা স্বৈরাচার প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং সমাজের সুধী অংশের রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে। দুটি যুক্তিই খুব দুর্বল।

দ্বিকক্ষ করলেন, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও কোনো দল দুই কক্ষেই ৭৬ শতাংশ আসন পাবে। তাহলে কী লাভ হলো?

আর সুধী হলেই শুধু হবে না, দেশ পরিচালনায় যোগ্যতা থাকতে হবে। আমরা চাই সরকার যেন মাথাভারী না হয়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে স্বৈরাচার প্রতিরোধ হবে না। শুধু সুধীজনদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরেকটা সংসদ বা কক্ষ করলে বিরাট ব্যয় বাড়বে।

প্রশ্ন

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি দীর্ঘদিনের। অনেকে মনে করেন, আমাদের সমাজের বাস্তবতায় এটা বাদ দিলে কি সংসদ সদস্য কেনাবেচার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে?

নজরুল ইসলাম: ব্যক্তিগতভাবে আমি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার পক্ষে নই। এটা তুলে দিলে বাণিজ্য হবে। আমরা জানি, আমাদের সংসদ সদস্যরা কী করেন। বেশির ভাগ দেখা যাবে টাকাপয়সা, সুযোগ–সুবিধার কারণে একেক দিন একেক পক্ষে যাবেন। একটি অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হবে। এখনকার পরিস্থিতি এটা বাদ দেওয়ার উপযোগী নয়। দলগুলো আগে সংহত হওয়া দরকার। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া দরকার।

প্রশ্ন

নির্বাচন পদ্ধতি যা–ই হোক, ভালো নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। এই স্বাধীনতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়?

নজরুল ইসলাম: এটা রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত। এখনকার আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি নাম প্রস্তাব করে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে বাছাই করেন। রাষ্ট্রপতিকে যদি স্বাধীন করা যায়, তাহলে তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবেন।

আরেকটি উপায় হলো, সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সংসদে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন পাওয়া না গেলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাসহ সবাই মিলে ভোট দেবেন। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কমিশন গঠন করা যেতে পারে।